কিভাবে পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধ করা যায়
সূচীপত্রঃকিভাবে পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধ করা যায় । নিত্যদিনের জীবনে পানির অপর নাম জীবন। তবে এই পানি পানের মাধ্যমে আমরা অনেক প্রকারের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছি নিয়ত। তাই এই অতিপ্রয়োজনীয় পানিবাহিত রোগ নিয়ে আজকের এই আলোচনা, কিভাবে পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
তবে এর সাথে আরো কিছু বিষয় নিয়ে আমরা গভীরভাবে আলোচনা করবো যেমন, পানি বাহিত রোগ কাকে বলে, পানিবাহিত রোগ প্রতিকারের উপায়, পানিবাহিত রোগের দুটি কারণ উল্লেখ কর, ৫টি পানিবাহিত রোগের নাম এবং পানিবাহিত রোগের লক্ষণ গুলি কি কি । এককথায় আমরা পানি নিয়ে যাবতীয় সমস্যা সম্পর্কে কথা বলার চেষ্টা করবো। আশা করি সাথে থাকবেন।
পানি বাহিত রোগ কাকে বলে
পানি বাহিত রোগ নিয়ে আমরা সবাই সচরাচর যা জানি, তা হচ্ছে অপরিষ্কার বা অপরিশোধিত পানি পানের মাধ্যমে এবং অপরিশুদ্ধ পানি দিয়ে খাওয়ার জন্যে রান্না করা থেকে শুরু করে পানির সাথে বহনকারী যে সমস্ত জীবাণু আমাদের দেহে প্রবেশ করে আমাদের রোগাগ্রস্থ করে তাকেই বলে পানি বাহিত রোগ।
এককথায় বলতে গেলে পানির মাধ্যমে আমাদের শরীরের যে সমস্ত রোগের আবির্ভাব হয় তাকেই পানিবাহিত রোগ বলে। তবে এই পানিবাহিত রোগ আমাদের শরীরের প্রবেশ করলেও বা পানিবাহিত রোগ কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় ধীরে ধীরে আমরা সেই কথায় এগিয়ে যাবো।
এতক্ষন আমরা জানলাম পানিবাহিত রোগ কাকে বলে। এই পানিবাহিত রোগ নিয়ে আমরা অনেকে অনেক কিছু জানি। তবে মধ্যকথা হচ্ছে কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় অনেকে সেই সম্পর্কে জানিনা।
চলুন তাহলে পানিবাহিত রোগের লক্ষণ গুলি কি ? পানিবাহিত রোগের কারণ কি এবং পানিবাহিত রাগের কি কি নাম থাকতে পারে সেগুলি একটু জেনে আসি।
পানিবাহিত রোগের লক্ষণ
পানিবাহিত রোগ কাকে বলে সেই সম্পর্কে আমরা জেনেছি। এখন জানার চেষ্টা করবো পানিবাহিত রোগের লক্ষণগুলি কি এবং এরপর ধীরে ধীরে জানবো কিভাবে পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধ করা যায় সেই সম্পর্কে। আগে পানিবাহিত রোগের সমস্যা সম্পর্কে জানি এরপর সমাধানের পথ নিয়ে আমরা আলোচনা করবো।
পানিবাহিত রোগের লক্ষণ অনেক প্রকারের হয়ে থাকে যেমন, ডায়রিয়া, চামড়ায় ফুসফুড়ি, কাশি, জ্বর, বমি, পেটব্যথা এবং ডিহাইড্রেশন। এছাড়া আরো অনেক রকমের পানিবাহিত রোগের লক্ষণ দেখা যায়।
এই সমস্ত লক্ষণগুলি দেখলে মনে রাখতে হবে এইগুলি সব পানিবাহিত রোগ। যা আমরা সবাই প্রায় সময় এই সমস্যা গুলি আমাদের মধ্যে দেখতে পাই, কিন্তু সমস্যা সম্পর্কে উপলব্দি করতে পারিনা শুধুমাত্র সচেতনতার অভাবে। তবে আমরা ধীরে ধীরে কিভাবে পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধ করা যায় সেই সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো। তাই চলুন আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যায়।
পানিবাহিত রোগের কারণ উল্লেখ কর
পানিবাহিত রোগ কি আমরা সবাই জানি, যা পরিষ্কার বা দূষণযুক্ত পানি ব্যবহার বা খাওয়ার কারণে মানুষের দেহে প্রবেশ করে এবং দৈহিকগত সমস্যার সৃষ্টি করে। এসব পানিবাহিত রোগের অন্তত বহু কারণ থাকতে পারে, তবে কিছু প্রধান কারণ নিম্নে আলোচনা করা হলো।
দূষিত পানি ও ব্যাকটেরিয়া
আমরা প্রতিদিন পানি পান করি এবং এইটা বাধ্যতামূলক শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ করার জন্যে। কিন্তু এই পানি পান করতে গিয়ে যখন দূষিত পানি পান করা হয় বা পানিতে ব্যাকটেরিয়া থাকায় আমাদের শরীরে খুব সহজে প্রবেশ করে এবং আমরা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ি।
যেমন আমাশয়, কলেরা এবং টাইফয়েট এর মত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ি। এই সমস্ত পানিবাহিত রোগগুলি সাধারণত দূষিত পানি বা ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়ে থাকে।
ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত বা অপরিষ্কার স্যানিটেশন ব্যবস্থা
ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত স্যানিটেশনে কারণে ও পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। যেমন অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন ব্যবস্থা, অপরিষ্কার টয়লেট এর কারণে এই পানি দূষিত হয়ে পড়া খুব সহজ একটি ব্যাপার।
দূষিত পানি যখন সাধারণ পানিতে মিশে যায় এবং সেগুলি আমরা পান করি বা শরীরে যেকোন কারণে প্রবেশ করে তাহলে আমাদের শরীরে পানিবাহিত রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস বা পরজীবী সহজে প্রবেশ করে পানিবাহিত রোগ সৃষ্টি করার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আবার খোলা জায়গায় মল ত্যাগের পরে সেই মল সাধারণ পানির মধ্যে মিশে যেতে পারে। যার ফলশ্রুতিতে আমাদের মধ্যে ডায়রিয়ার মত এবং হেপাটাইটিস-এ এর মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বিশুদ্ধ পানির অভাব
যদিও আমরা এখন ডিজিটাল যুগে আছি, তারপর ও দেখবেন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিশুদ্ধ পানির খুবই অভাব রয়েছে প্রতিনিয়ত। কারণ আমরা এখন পানিকে অনেক্ষন এবং অনেকদিন ধরে ট্যাঙ্কে ধরে রেখে সেই পানি দিয়ে ব্যবহার বা খাওয়া দাওয়া ও রান্না বান্না পর্যন্ত করে থাকি।
কিন্তু ট্যাঙ্ক দীর্ঘদিন অপরিষ্কার থাকার কারণে পানি দূষিত হয়ে যেতে পারে এবং সেই দূষিত পানি পানের মাধ্যেম পানিবাহিত রোগের কারণ হতে পারে। তাই বিশুদ্ধ পানি পান করা পানি বাহিত রোগ প্রতিরোধের একটি উপায় হতে পারে।
এছাড়াও যে সব এলাকাতে বিশুদ্ধ পানির অভাব এবং পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ব্যহত হচ্ছে সেই সব এলাকায় বিশুদ্ধ পানির অভাবে মানুষ অপরিষ্কার পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছে এর মাধ্যমেও পানিবাহিত রোগের সৃষ্টি হচ্ছে।
জনসচেতনতার অভাব
কিভাবে পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধ করা যায় এই সম্পর্কে অনেকে সচেতন না থাকার কারণে অর্থাৎ জনসচেতনতার অভাবে ও মানুষ দূষিত পানি পানের মাধ্যমে পানিবাহিত রোগে পতিত হতে পারে।
৫টি পানিবাহিত রোগের নাম
পানিবাহিত রোগের নাম গুলি আমরা অনেকে জানি কিন্তু কি কারণে হয় সেটা অনেকের কাছে অজানা। তবে আমরা নিচে ৫টি পানিবাহিত রোগের নাম সম্পর্কে বলার চেষ্টা করছি যা পানিবাহিত রোগের জন্যে প্রধান হিসেবে দায়ী।
ডায়রিয়া
আমাশয়
কলেরা
টায়ফয়েট
হ্যাপাটাইটিস
এই সব রোগগুলি বিশেষকরে দূষিতপানি পান করার মাধ্যমে মানুষের শরীরে দেখা দেয়। তবে কিভাবে এই পানিবাহিত রোগ গুলি প্রতিরোধ করা যায় আমরা সেই সম্পর্কে বলার চেষ্টা করছি।
কিভাবে পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধ করা যায়
পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধ করা তেমন কোন কঠিন কাজ নই। খুব সহজে আমরা সচেতনতার মাধ্যমে এই পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধ করতে পারি। তবে আমাদের দেশ বন্যাপ্রবণ দেশ। এইখানে বৃষ্টির দিনে একটু ভারী বর্ষণ হলেই পানির আনাগুনা বেশি দেখা যায় এবং বন্যার সময় সহজে বসতবাড়িতে এবং খাবার পানির ট্যাঙ্কে পানি প্রবেশ করে।
এই সময় আমাদের দেশে একটু পানিবাহিত রোগের আবির্ভাব ঘটে। যেমন কলেরা, ডায়রিয়া এবং হেপাটাইটিস গুলি বেশি দেখা দেয়। এই সময় অনেকে পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধের কথা বেশিরভাগ মানুষ জানতে চাই। কিভাবে পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধ করা যায় সেই বিষয় আমরা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ সম্পর্কে জেনে আসি চলুন।
বিশুদ্ধ পানি পান নিশ্চিত করা
পানি বাহিত রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ পানি পান করা প্রথমেই নিশ্চিত করতে হবে। এই সময় বিশেষ করে ফুটানো পানি বা ফিল্টার করে পানি পান করা জরুরি। আবার বাজারে পানি বিশুদ্ধকরুন টেবলেট ও পাওয়া যায় যা খুবই ভালো কার্যকরী।
সাবান দিয়ে হাত ধুয়া
খাবার আগে এবং পরে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে কারণ এই অপরিষ্কার হাতে খাবার খাওয়ার মাধ্যমে ও হাত থেকে পানিবাহিত রোগ হতে পারে। আবার পয়োনিষ্কাশনের পরে ভালো করে হাত ধুয়ার মাধ্যমে ও অনেক বড় সমস্যা অর্থাৎ পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
খাবার ও রান্নার সময় পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
খাবার রান্না ও খাবার খাওয়ার সময় পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। এর সাথে বাসি এবং পচা দুর্গন্ধযুক্ত খাবার পরিহার করা প্ৰয়োজন সাথে খাবার ঢেকে রাখা ও খুবই দরকার যাতে করে কোন মাছি বা ময়লা আবর্জনা না পড়তে পারে।
জনসচেতনতা বৃদ্ধি
মানুষের মাঝে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা খুবই প্ৰয়োজন পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধ গড়ে তুলার ক্ষেত্রে। পরিবার, প্রতিবেশী এবং বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনে পানিবাহিত রোগ পরিরোধের ধোঁয়া জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা দরকার।
কিভাবে পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধ করা যায় এই নিয়ে সমাপ্তি বার্তা
পানিবাহিত রোগ নিয়ে আমাদের মাঝে অনেক কথা থাকলেও আমরা এই আর্টিকেলে বলার চেষ্টা করেছি কিভাবে পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধ করা যায়। এর সাথে পানিবাহিত রোগ কিভাবে হয় এবং লক্ষণ সম্পর্কে। তবে পানিবাহিত রোগ আমাদের প্রায় সময় হয় এবং আমরা সেটা কিভাবে প্রতিহত করবো বা সচেতন হবো সেই বিষয় নিয়ে অনেক্ষন ধরে বলার চেষ্টা করেছি আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url