বাচ্চাদের কানের পর্দা ফেটে গেলে লক্ষন ও করণীয় কি

বাচ্চাদের কানের পর্দা ফেটে গেলে করণীয়


সূচীপত্রঃবাচ্চাদের কানের পর্দা ফেটে গেলে করণীয় । কানের পর্দা ফেটে যাওয়া একটি সাধারণ ব্যাপার। অনেক কারণেই এই সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে অনেকে। বিশেষকরে বাচ্চাদের কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার সমস্যা হয় হামেশা দেখা যায়। তবে এটি তেমন কোন সমস্যা নই, যদি সঠিভাবে পরিচর্যা এবং চিকিৎসা ও যত্ন নেওয়া যায়।


আজকে বিশেষ করে বাচ্চাদের কানের পর্দা ফেটে গেলে করণীয় কি সেই নিয়ে কথা হবে। এর সাথে নবজাতকের কানে দুধ গেলে করণীয়, বাচ্চাদের কানে পুজ হলে কি করনীয়, কানের পর্দা জোড়া লাগতে কতদিন সময় লাগে, কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার লক্ষণ এবং কানের পর্দা জোড়া লাগানোর ঔষধ নিয়ে কথা হবে। শুধু বাচ্চাদের কানের পর্দা ফেটে যাওয়া ছাড়াও বড়দের ও যদি কানের পর্দা ফেটে যায় তাহলে কি কি করণীয় সেই নিয়ে ও কথা বলার চেষ্টা করবো এই আর্টিকেলে। 

বাচ্চাদের ও বড়দের কানের পর্দা কেন ফাটে 


কানের পর্দা নিয়ে কথা বলার আগে জানার চেষ্টা করবো কানের পর্দা কি এবং কেমন। কানের পর্দাকে ইয়ারড্রোম ও বলে থাকে। এটি একধরনের পাতলা টিস্যু যা মানব দেহের সমস্ত শব্দ শোনার জন্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই পাতলা টিস্যু টি যদি কোন কারণে ফেটে যায় তাহলে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়। 


কানের পর্দা বিভিন্ন কারনে ফেটে যেতে পারেন। অর্থাৎ কানের অভ্যন্তরে থাকা এই টিস্যু যদি কোন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে যত বিপত্তি। তবে কি কি কারণে বাচ্চাদের ও বড়দের কানের পর্দা ফেটে পারে সেই কারণ গুলি জেনে আসি। 


কানের ভিতরে কোন প্রকার সংক্রমের জন্যে কানের পর্দা ফেটে যাওয়া একটি অন্যতম কারণ হতে পারে। 


বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ঠান্ডা জনিত সমস্যার কারণে অথবা গোসল করার সময় যদি কানের ভিতরে পানি জমে গিয়ে ইনফেকশন হয় তাহলে কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে বা ফেটে যায়। 


অপ্রস্তুত অবস্থায় যখন হঠাৎ বিকট আওয়াজ হয় তখন ও অতিরিক্ত আওয়াজের ফলে কানের পর্দা বাচ্চাদের এবং বড়দের ক্ষেত্রে ফেটে যায় বা যেতে পারে। 


বিমানের বিকট আওয়াজের ফলে ও কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে। 

পানিতে ডুব দেওয়ার ফলে অত্যন্ত নিচে প্রবেশ করলে অতিরিক্ত পানির চাপেও কানের পর্দা ফেটে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। 


সাধারণ কিছু বিষয়ের মধ্যে, যেমন কানের অভ্যন্তরে ময়লা পরিষ্কার করতে গিয়ে আমরা কাটি বা হেয়ার পিন ব্যবহার করে থাকি সেই ক্ষেত্রে অনেক সময় হেয়ারপিন ও কাঠির আঘাতে কানের পর্দায় আঘাত হলে কান ফেটে যায়। 


আবার অনেক সময় বাচ্চাদের কানের ভিতরে কিছু ঢুকিয়ে দিয়েও ইনফেশনের মাধ্যমে ও কানের পর্দার ফেটে যাওয়ার সমস্যা প্রায় সময় হয়ে থাকে। 


এক কথায় আমাদের কানের পর্দা হচ্ছে ঢোলের উপরের চামড়ার মত যা খুবই পাতলা। উপরোক্ত কারণে এই হালকা পর্দা ফেটে গেলে যতসব বিপত্তি ঘটে থাকে।  

বাচ্চাদের কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার লক্ষণ


বাচ্চাদের কানের পর্দা ফেটে গেলে করণীয় কি এই কথাটি নিয়ে আমাদের জার্নি আমরা শুরু করেছিলাম। তবে করণীয় এর আগে কানের পর্দা ফাটলে লক্ষণ কি সেটা আমাদের জানা দরকার। কারণ হচ্ছে বাচ্চারা নিজের কষ্ট একদম বুজিয়ে বলতে পারে না। এই ক্ষেত্রে মা বাবা কে সচেতন থাকা খুবই জরুরি। বাচ্চাদের কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার লক্ষণ গুলি আমরা নিচে বলার চেষ্টা করছি। 


  • কান দিয়ে হলদে বা রক্তমিশ্রিত তরল বের হয় একটি মারাত্মক লক্ষণ। 
  • হটাৎ করে খুবই তীব্রভাবে ব্যথা লাগে এই সময় বাচ্চারা কান্নাকাটি করে আবার কিছুক্ষন পর ব্যথা কমে যাওয়া। 
  • বাচ্চাদের কানের পর্দা ফেটে গেলে এই সময় ঝাপসা শুনবে এবং বাচ্চাকে ডাকলে ও সাড়া না দেওয়া। 
  • বার বার বচ্চা কান চুলকাবে বা কান স্পর্শ করার চেষ্টা করবে কারণ এই সময় বাচ্চার অনেক অস্বস্তিবোধ হয়।  
  • বাচ্চা ঘুমানোর সময় ঘন ঘন কান ধরার মত অঙ্গভঙ্গি বেশি দেখা যায়। 
  • কান ফেটে গেলে লক্ষণ এর মধ্যে জ্বর আসবে যা ইনফেকশনের উপসর্গ। 
  • অকারণে কাঁদবে এবং খিটখিটে ভাব দেখা যাওয়ায় বাচ্চাদের কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার একটি লক্ষণ।  

নবজাতকের কানে দুধ গেলে করণীয়


নবজাতকের দুধ খাওয়ানো নিয়ে অনেক সমস্যার কথা শুনে থাকি। তার মধ্যে প্রধান হলো নবজাতকের দুধ খাওয়ানোর সময় কানে দুধ চলে যাওয়া। আমরা বিশেষ করে কান ফাটা নিয়ে অনেক কথা শুনে থাকি। তবে নবজাতকের কানে দুধ চলে গেলে কান ফেটে যাওয়ার মত সন্দেহ বিশেষ করে থেকে যায়। 


নবজতকের দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায়, অসতর্কতার সহিত কানের মধ্যে দুধ চলে যায়। এটি সাধারণ ঘটনা হলেও সমস্যা কিন্তু খুব জটিল হতে পারে। তাই এই ক্ষেত্রে একটু সাবধানতার সহিত নবজাতকের দুধ খাওয়ানো দরকার।


সমস্যার মধ্যে দেখা যায়, মায়ের বুকের দুধে চিনির পরিমান বেশি থাকায় ওই দুধ বাচ্চাদের কানে গেলে ব্যাকটেরিয়ার আধিক্য বৃদ্ধি পাই। তাই কানের ভিতর মারাত্মক ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

করণীয় 


নবজাতকের কানে দুধ পড়েছে এমন কান টি নিচের দিকে কাত করে রাখা ভালো যাতে করে কিছুটা দুধ বের হয়ে আসতে পারে। 


করণীয় হিসেবে কানে কিছু দিয়ে খোঁচানোর চেষ্টা থেকে বিরত থাকুন। এতে করণীয় সমস্যা আরো বৃদ্ধি হতে পারে। 


এরপর জরুরি একজন শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন কারণ এতে করে ডাক্তার বুজবেন যে কানের মধ্যে কোন ইনফেকশন হয়েছে কিনা। পরবর্তীতে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। 

বাচ্চাদের কানে পুজ হলে কি করনীয়


বাচ্চাদের কানের পর্দা ফেটে গেলে করণীয় কি এই বিষয়ের উপর আমরা কথা শুরু করেছিলাম, কিন্তু এখন ধীরে ধীরে আমরা আরো গভীরে এসেছি। এখন কথা বলার চেষ্টা করবো বাচ্চাদের কানে পুজ হলে কি করণীয়। এই সমস্যা প্রায় বাচ্চাদের জীবনে দেখা যায় কানে পুজ হওয়া। 


বাচ্চাদের কানে পুজ হলে করণীয় অনেক কিছু আছে। তবে কিছু বিষয় জেনে রাখা ভালো যে, বাচ্চাদের কান হচ্ছে খুবই সংবেদনশীল একটি এরিয়া। অনেক সময় ইনফেকশনের কারণে বাচ্চাদের কানে পুজ হয়। তবে এই ক্ষেত্রে কিছু বিষয় করণীয় রয়েছে। 


কারণ কানে পুজ বের হওয়া যেকোন ধররণের সংক্রমের লক্ষণ। সেটি হতে পারে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের আক্রমণ।  আবার অনেক সময় দেখা যায়, বাচ্চাদের কান পরিষ্কার করতে গেলে সে সময় দুর্ঘটনা বসত আঘাত লেগে সমস্যার সৃষ্টি হয় এবং তা থেকে ইনফেকশন হয়ে যায়। 


এই সময় বাচ্চা যদি কান চুলকায়, কান টানে বা কান ব্যথা নিয়ে কান্নাকাটি করে, তাহলে বুঝতে হবে সমস্যা শুরু হয়েছে। 


যদি দেখেন যে, কানে পুজ বের হচ্ছে তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের শরণাপন্ন হয় খুবই জরুরি এবং এইক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক ড্রপ এবং সাথে প্ৰয়োজনীয় ওষুধ দিতে পারেন। তবে নিজে থেকে কিছু করতে যাবেননা এতে করে হিতে বিপরীত হতে পারে। 


যেমন কাটি দিয়ে কান পরিষ্কার করা এইসব একদম করা যাবেনা। এই সময় পারলে বাচ্চাকে নিকটস্থ শিশু বিশেষজ্ঞ বা নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে দ্বারস্থ হতে পারেন। এর সাথে কানে পানি দেওয়া থেকে একদম বিরত থাকবেন।  

বাচ্চাদের ও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের কানের পর্দা জোড়া লাগতে কতদিন সময় লাগে


কানের পর্দা নিয়ে অনেকে দুশ্চিন্তায় পড়ে যখন মানুষের কানের পর্দা ফেটে যায়। কেউ মনে করেন কানের পর্দা কি নিজে নিজে ঠিক হবে নাকি চিকিৎসা নিতে হবে ? আর যদি হয় ও তাহলে বাচ্চাদের ও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের কানের পর্দা জোড়া লাগতে কতদিন সময় লাগে ?


তবে বাচ্চাদের ও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে কানের পর্দা ফেটে গেলে। সাধারণত কানের পর্দা ফেটে গেলে নিজে নিজে জোড়া লাগে যায়।  তবে সেটি নির্ভর করে ফেটে যাওয়ার উপর। কানের পর্দা যদি ফেটে যায় তাহলে সেটি কত বড় ছিদ্র হয়েছে তার উপর। 


তবে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সাধারণত বেশি আকারে যদি আঘাত না লাগে বা বড় কোন ক্ষতি না হয় তাহলে সেটি ২ থেকে ৪ সপ্তাহের ভিতরে জোড়া লেগে যায় যদি তেমন কোন বেশি ইনফেকশন না হয়। 


এর ভিতর ভালো করে যত্ন নেওয়ার ও একটি ব্যাপার থাকে, যাকে বলে বাচ্চাদের কানের পর্দা ফেটে গেলে করণীয় কি তেমন একটা ব্যাপার। যেমন কানের ভিতর যেন কোন পানি যায়। কোন কিছু দিয়ে যেন কান পরিষ্কার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। 


আবার অন্যদিকে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে সময়টা একটু বেশি লাগে, যেমন ৪ থেকে ৮ সপ্তাহ পর্যন্ত কানের পর্দা জোড়া লাগতে সময় লাগতে পারে। পুনরায় একই ভাবে, যদি বেশি বড় কোন সমস্যা না হয় বা কানের পর্দা বড় করে ফেটে না যায়। 


আর যদি কানের পর্দা বেশি সমস্যা হয় তাহলে ডাক্তারের চিকিৎসার সাথে অস্ত্রোপচার ও করার দরকার হতে পারে। মনে রাখতে হবে এই সময় কানের ভিতর যেন কোন কারণে পানি না যায় এবং কোন কিছু দিয়ে যেন কান খোঁচানো না যায়। 

কানের পর্দা জোড়া লাগানোর ঔষধ


কানের পর্দা খুব সংবেদনশীল একটি জায়গা যা দিয়ে আমরা শুনি সমস্ত কথা। তবে অনেকের মনে সংশয় যে কানের পর্দা ফেটে গেলে জোড়া লাগানোর জন্যে কি ঔষধ ব্যবহার করা প্রয়োজন। কারণ অনেক সময় সঠিক ঔষধ প্রয়োগের ফলে কানের পর্দা জোড়া লাগতে পারে। 


এই ক্ষেত্রে একটি কথা আছে যে, ক্ষতি কতটা হয়েছে এবং কি কারণে পর্দা ফেটেছে। তবে কানের পর্দা ফাটলে সব ক্ষেত্রে সার্জারির দরকার নেই। কানের পর্দা ফেটে গেলে চিকিৎসক প্রথমেই কিছু বিশেষ ধরনের *অ্যান্টিবায়োটিক কান ড্রপ* প্রেসক্রাইব করেন। 


এগুলো ইনফেকশন কমাতে সহোযোগীতা করে এবং ফাটা জায়গাকে খুব সহজে  শুকানোর জন্যে সাহায্য করে। কিছু ড্রপ আছে যা ব্যথা কমায় এবং একইসাথে নিরাময়েও সহায়তা করে।যেমনঃ  


যেমনঃ


Ciprofloxacin Ear Drops (সিপ্রোফ্লক্সাসিন ইয়ার ড্রপ)

Ofloxacin Otic Solution (অফলক্সাসিন ওটিক সলিউশন)

Neomycin বা Polymyxin B (নিওমাইসিন = পলিমাইক্সিন বি)


বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ 

🔴 * নিজে থেকে কোনো ঔষধ ব্যবহার করা একদম উচিত নয়।*

কারণ ভুল ঔষধে শ্রবণশক্তির স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।

বাচ্চাদের কানের পর্দা ফেটে গেলে করণীয় নিয়ে শেষ কথা


আমার প্রানপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা, এতক্ষন ধরে আমরা 'বাচ্চাদের কানের পর্দা ফেটে গেলে করণীয়' নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে অনেক কিছু বিশেষ করে কানের পর্দা নিয়ে বলার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনাদের ভালো লেগেছে। যদি ভালো লেগে থাকে আমাদের সাথে ইমেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করবেন আমরা আরো ভালো কিছু ইনফরমেশন দেওয়ার চেষ্টা করবো। 


কান পাকলে বা পর্দা ফেটে গেলে কী করবেন


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪