কয়েলের ধোঁয়া কি ক্ষতিকর এবং কয়েলের ধোঁয়া ছোট শিশুদের কি ক্ষতিকর
সূচীপত্রঃকয়েলের ধোঁয়া কি ক্ষতিকর । প্রতিদিন আমরা সুখে ঘুমানোর জন্যে কত কিছু করে থাকি। এক বা একাধিক মানুষ নির্ভয়ে জেলখানার সমান মশারির ভিতর ঘুমিয়ে থাকি শুধু ছোট্ট একটি প্রাণীর ভয়ে। আবার অনেকে মশারির ভিতর বৈদ্যুতিক পাখার বাতাস ভালো করে লাগে না বলে বেশিরভাগ মানুষ কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমিয়ে থাকি ।
এতক্ষন নিশ্চয় বুজতে পারছেন কে সেই ভয়ানক প্রাণী। হ্যা সেটি হচ্ছে মশা। যার উৎপাতে মানুষ কয়েলের ক্ষতিকর ধোঁয়া বরণ করে নিচ্ছে। আমরা কয়েলের ধোঁয়া কি ক্ষতিকর সেই সম্পর্কে আলোচনা করবো। যেহেতু এখন ডেঙ্গুর খুব প্রখরতা বেড়েছে। তার সাথে হ্যা আরো কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করবো যা মানুষের জানা খুবই প্রয়োজন ।
যেমন কয়েল জ্বালালে ধোঁয়ায় মুখ জ্বলে কেন, মশার কয়েল তৈরির উপাদান, কয়েলের ধোঁয়া ছোট শিশুদের কি ক্ষতিকর, কয়েলের ধোঁয়া মানব দেহের কি কি ক্ষতি করে এবং সর্বোপরি বাচ্চারা মশার কয়েল খেলে কি হয় এই নিয়ে আলোচনা বিশদ আলোচনা করার চেষ্টা করবো যদি আপনারদের সহযোগিতা থাকে ।
ক্ষতিকর ধোঁয়ার মশার কয়েল তৈরির উপাদান
কয়েলের ধোঁয়া কি ক্ষতিকর সেই বিষয়ে আমাদের প্রবেশ করার আগে কয়েলের উপাদান গুলি কি মানে কয়েল কি উপাদান দিয়ে তৈরি সেইটা জানা আমাদের জন্যে খুবই জরুরি। যে কয়েল আমরা নিজের সুখের জন্যে ব্যবহার করছি সেটি সম্পর্কে জানা আমাদের জন্যে খুবই প্রয়োজন।
কয়েল তৈরি হয় বিশেষ করে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান দিয়ে। যা মানব দেহের জন্যে খুবই ক্ষতিকর। আমরা সেই ক্ষতিকর বিষয়ে পরে আসছি। মশার কয়েলের উপাদানগুলি হলো
- এসবিথোথ্রিন
- ডাইমফ্লুথ্রিন
- পাইরেথ্রাম
- পাইপারনিল বাটক্সাইড
- অ্যালেথ্রিন
- ম্যাপফ্লুথ্রিন
- পাইরেথ্রিনস
কয়েল জ্বালালে ধোঁয়ায় মুখ জ্বলে কেন
কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমানো আমাদের মধ্যে একটি বদভ্যাসে পরিণত করেছে। বর্তমানে কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমানো একটি সুখের অভ্যাস। কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠলে দেখা যায় মুখে জ্বালা করে। এটি খুবই অস্বস্থিকর।
অনেকের প্রশ্ন কয়েল জ্বালালে ধোঁয়ায় মুখ জ্বলে কেন ? যদিও আমরা কয়েলের ধোঁয়া কি ক্ষতিকর এই নিয়ে কথা বলছিলাম। কিন্তু কয়েল জ্বালালে ধোঁয়ায় মুখ জ্বলে কেন এটি ও একটি ক্ষতিকর দিকে পড়ে।
কয়েলে থাকা pyrethrum (পাইরেথ্রাম)নামক এক ধরণের রাসায়নিক উপাদান যা আমাদের মুখে জ্বলনের সৃষ্টি করে। শুধু মুখে জ্বালানোর সৃষ্টি করেনা আরো অনেক সমস্যার সৃষ্টি করে যেমন মাথাব্যথা এবং বমি বমি ভাব।
আরো থাকে কার্বন। এই কার্বন যখন পুড়ে তখন ধোয়ার সৃষ্টি হয়। এই ধোঁয়া খুবই ক্ষতিকর।
কয়েলের ধোঁয়া ছোট শিশুদের কি ক্ষতিকর
আমাদের যাত্রা শুরু করেছিলাম " কয়েলের ধোঁয়া কি ক্ষতিকর " এই বিষয়ের উপর। এবার ধীরে ধীরে বলার চেষ্টা করবো কয়েলের ধোঁয়া ছোট শিশুদের কি জন্যে কি ক্ষতিকর কিনা। প্রথমে শুরু করতেই বলবো হ্যা অবশ্যই ক্ষতিকর তবে একদিনে নই দীর্ঘদিনে । শুধু ক্ষতিকর না খুবই মারাত্মক ক্ষতিকর।
মশার কয়েল জ্বালিয়ে বাঁচার চেষ্টায় নিজেকে মৃত্যুকে দিকে ঠেলে দিচ্ছেন অজান্তে। কয়েলের ধোঁয়ার মধ্যে থাকা রাসায়নিক উপাদান যেমন পাইরেথ্রিন এবং কারণ মনোক্সাইড শিশুদের জন্যে খুবই বিপদজনক হতে পারে।
যেমন এই কয়েলের ধোঁয়া ছোট শিশুদের শ্বাসনালীর ক্ষতি করে খুবই। এর সাথে দীর্ঘমেয়াদি হাঁপানির সমস্যা হতে পারে। কারণ ধোঁয়া শ্বাসনালিতে গিয়ে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করে। এবং এই কয়েলের ক্ষতিকর ধোঁয়া স্বাসকষ্ট ও এলার্জির সৃষ্টি করে থাকে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে শিশু ছোট কাল থেকে কয়েলের ধোয়ার মধ্যে ঘুম গেছে তারা পরবর্তীতে হাঁপানির সমস্যা হতে পারে। তাই আপনার শিশুকে অবশ্যই কয়েলের ক্ষতিকর ধোঁয়া থেকে সরিয়ে রাখুন এবং সুস্থ একটি জীবন দান করুন।
কয়েলের ধোঁয়া কি ক্ষতিকর
শুধু কয়েলের ধোঁয়া কি ক্ষতিকর কিনা এই কথা জিজ্ঞেস করার জন্যে বা জানার জন্যে যারা এসেছেন তাদের প্রতি বলবো যে, সর্বস্থরের মানুষের জন্যে কয়েলের ধোঁয়া খুবই ক্ষতিকর। কারণ ক্ষতিকর মশার কয়েলের ধোঁয়া দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার তৈরি করে।
কয়েলের ধোঁয়া মানব দেহের জন্যে অত্যন্ত ক্ষতি সাধন করতে পারে। কয়েল জ্বলতে শুরু করলে এটি নানা রকমের বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ এবং কণিকা মুক্ত করে। এই সমস্ত রাসায়নিক উপাদান মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের দ্বারা শরীরে প্রবেশ করে থাকে, যা শ্বাসনালী এবং ফুসফুসের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়।
কয়েলের ধোঁয়ার মধ্যে সাধারণত কার্বন মনোক্সাইড, ফরমালডিহাইড এবং অন্যান্য ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকে। এই উপাদানগুলি শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করলে তা দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, যেমন হাঁপানি, কাশি, এবং শ্বাসকষ্ট। শিশু এবং গর্ভবতী নারীদের জন্য এর প্রভাব আরও বেশি ক্ষতিকর হতে পারে।
এছাড়া, কয়েলের ধোঁয়ার কারণে মাথা ব্যথা এবং দৃষ্টির সমস্যাও দেখা দিতে পারে। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ধোঁয়া অ্যালার্জির কারণ হতে পারে, যা ত্বকে জ্বালা এবং লালভাব সৃষ্টি করে।
কয়েলের ধোঁয়া অবশ্যই ক্ষতিকর। তাই, কয়েল ব্যবহার করার সময় যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যদি সম্ভব হয়, খোলামেলা জায়গায় কয়েল ব্যবহার করা উচিত এবং বায়ু চলাচল নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এর ফলে ধোঁয়ার নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে আনা সম্ভব।
কয়েলের ধোঁয়া মানব দেহের কি কি ক্ষতি করে
কয়েলের ধোঁয়া কি ক্ষতিকর এই প্রশ্ন অনেকে করে থাকেন। তার সাথে রয়েছে কয়েলের ধোঁয়া মানব দেহের কি কি ক্ষতি করে। যেহেতু কয়েল রাসায়নিক উপাদান দিয়ে তৈরী সেহেতু অবশ্যই ক্ষতি সাধন করে এই ক্ষতিকর কয়েলের ধোঁয়া। আমরা কিছু ক্ষতিকর দিক লিস্ট আকারে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।
- কয়েলের ক্ষতিকর ধোঁয়া শ্বাসনালীর সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে যা পরবর্তীতে কাশি ও শ্বাসকষ্টের জন্যে দায়ী। এমনকি স্বাসনালির দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার তৈরি হতে পারে।
- ফুসফুসের স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে থাকে। নিত্যদিন যারা কয়েলের ধোঁয়ার সাথে বসবাস করে থাকেন তারা স্থায়ীভাবে ফুসফুসের সমস্যায় ভুগতে পারেন সাথে হাঁপানি।
- চোখের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে থাকে ক্ষতিকর কোয়েলের ধোঁয়া যা চোখ জ্বালা এবং চোখ লালচে ভাবের সৃষ্টি করে পরে অস্বস্তিতে ভুগে থাকেন।
- ত্বকের উপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে যা এলার্জিতে পরিণত হয় তবে বিশেষ করে সংবেদনশীল ত্বকের ক্ষেত্রে।
- কার্বন মনোক্সাইড থাকায় দেহের মধ্যে অক্সিজেন সরবরাহে বিঘ্ন ঘটিয়ে থাকে।
- মাথাব্যথার সমস্যা তৈরী করতে পারে এই ক্ষতিকর কয়েলের ধোঁয়া। বিশেষ করে যারা মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে।
- দীর্ঘদিন ধোঁয়ার সাথে বসবাস কারী মানুষদের ক্ষেত্রে কয়েলের ক্ষতিকর ধোঁয়া মানব দেহের হার্টের সমস্যা তৈরী করে।
- গর্ভবতী নারীদের জন্যে খুবই মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে সাথে অনাগত শিশুর জন্যেও বিপদ ডেকে আনতে পারে।
- এলার্জি রয়েছে এমন মানুষদের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট ও এলার্জি জনিত ত্রুটি দেখা দিতে পারে।
বাচ্চারা ক্ষতিকর মশার কয়েল খেলে কি হয়
কয়েলের ধোঁয়া কি ক্ষতিকর এই কথার উপর ভিত্তি করে আমরা অনেক দূর চলে এসেছি এবার চেষ্টা করবো বলার জন্যে যে, বাচ্চারা ক্ষতিকর মশার কয়েল খেলে কি হয়।
বাচ্চারা যদি ক্ষতিকর মশার কয়েল খেয়ে নেয় , তাহলে এর ফলে বিভিন্নরকম দৈহিক ত্রুটি দেখা দিতে পারে । সাধারণত কয়েলের মধ্যে বিদ্যমান রাসায়নিক উপাদান গুলি মানুষের জন্য খুব একটা নিরাপদ নয়, এবং তারউপর একটি বাচ্চার জন্যে তো একদম বেশি নিরাপদ নই।
এই ক্ষতিকর কয়েলের ধোঁয়া শিশুদের শরীরের জন্যে গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে । এর মধ্যে যদি কোন বাচ্চারা ক্ষতিকর মশার কয়েল খেয়ে ফেলে তাহলে তার সম্পর্কে আমরা নিচে লিস্ট আকারে বলার চেষ্টা করলাম।
- ক্ষতিকর মশার কয়েল খেয়ে ফেললে একটি বাচ্চার পেটের বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। তারমধ্যে পেট ব্যথা, বমি এবং ডায়রিয়ার মত সমস্যা গুলি দেখা দিতে পারে।
- কয়েলের উপাদানগুলি শ্বাসনালিতে চলে গেলে বাচ্চাদের স্বাস নিতে খুবই কষ্ট হয়ে যাবে এবং নানারকম অসুবিধার সৃষ্টি করতে পারে।
- ক্ষতিকর মশার কয়েলে থাকা রাসায়নিক পদার্থের কারণে শিশুদের অ্যালার্জি সৃষ্টি হতে পারে, যা ত্বকে জ্বালার সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
- দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার ক্ষেত্রে কয়েলের উপাদানগুলি শরীরে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, যা ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যগত জটিলতার কারণ হতে পারে।
কয়েলের ধোঁয়া কি ক্ষতিকর এই নিয়ে লেখকের শেষ মন্তব্য
"কয়েলের ধোঁয়া কি ক্ষতিকর" এই নিয়ে কথা বলতে বলতে অনেক দূর আমরা চলে এসেছি একদম শেষ প্রান্তে। তবে কয়েলের ধোঁয়া খুবই বিষাক্ত যা একজন মানুষের জন্যে স্লো পয়জনের মতোই ক্ষতিকর। এই ক্ষেত্রে পরামর্শ থাকে যে, কয়েলের ধোঁয়া থেকে মুক্ত থাকুন এবং মশারি টাঙ্গিয়ে ঘুমানোর অভ্যাস করুন এতে যদি একটু কষ্ট হয়। কারণ দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা থেকে মুক্ত হতে চাইলে একটু কষ্টকে বরন করার জন্যে প্রস্তুত থাকুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url