মানসিক অবসাদের লক্ষণ এবং মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তির উপায়

মানসিক অবসাদের লক্ষণ


সূচীপত্রঃমানসিক অবসাদের লক্ষণ । মানসিক অবসাদ কথাটি অত্যন্ত গভীর হলে ও ব্যক্তি জীবনযাত্রার সাথে খুবই ঘনিষ্টতা রয়েছে। মানসিক অবসাদ গ্রস্থ হয়নাই এমন মানুষ পাওয়া বড়োই দুষ্কর। ছোট শিশু থেকে শুরু করে একদম ৮০ বছরের বৃদ্ধের পর্যন্ত মানসিক অবসাদ আসে । তাই আজকে আমরা মানসিক অবসাদের লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করবো । 

শুধু মানসিক অবসাদের লক্ষণ নই শুধু আরো অনেক কিছু থাকবে যেমন, মানসিক অবসাদ কী এবং মানসিক অবসাদ কাকে বলে, মানসিক অবসাদের কারণ, মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তির উপায় এবং এমনকি মনসিক অবসাদ বা ডিপ্রেশন হলে কি কি সমস্যা হয় তা নিয়ে ও আমরা বলতে বলতে গভীরে পৌঁছনোর চেষ্টা করবো । 

মানসিক অবসাদ কী এবং কাকে বলে


মানসিক অবসাদ কি এবং মানসিক অবসাদের লক্ষণ কি অথবা মানসিক অবসাদ কাকে বলে এই বাক্যগুলির সম্পর্কে আমরা কম বেশি  সবাই পরিচিত। অনেকে মানসিক অবসাদে ভোগে কিন্তু বিষয়টি কেন হয় বা আদো এই মানসিক অবসাদ কেন মানুষের মধ্যে আসে সেই সম্পর্কে অনেকে অজ্ঞ। 


মানসিক অবসাদ হলো একধরনের মানুষের মনের আশা, আকাঙ্খা, চাহিদা এবং পাওয়া যখন পূরণ হয় না তখন মনের মধ্যে চুপিসারে অবসাদ এসে ভর করে।


আরো ভালো করে বলতে গেলে বলতে হয়, মানুষের গভীর চাওয়া পাওয়ার যে আর্তনাদ তা যদি যতাযত পূরণ না হয় তখন না পাওয়ার মুহূর্তে আমাদের একটি দুঃখের সঞ্চার হয় মনের মধ্যে, তখন তাকেই বলে মানসিক অবসাদ। 


এক ধরণের হাহাকার না পাওয়ার দুঃখ, আর্তনাদ এবং অসহায়ত্ব এসে ভর করে সেটিই হলো মানসিক অবসাদ। এই মানসিক অবসাদ অনেক কারণে হয়ে থাকে। মানুষের মন এবং দেহ এই দুটির মাধ্যমে মানসিক অবসাদের শুরু হতে পারে। 


মানসিক অবসাদের লক্ষণ রয়েছে অনেকগুলি যা দেখলে মনোবিজ্ঞানীরা বিশেষভাবে চিহ্নিত করতে পারে যে কোন মানুষ কোন মানসিক অবসাদে ভুগছেন। চলুন তাহলে আমরাও ধীরে ধীরে আরো গভীরে প্রবেশ করি এই মানসিক অবসাদ নিয়ে।  

মানসিক অবসাদের কারণ


এতক্ষন ধরে মানসিক অবসাদে কি এবং কাকে বলে এই সম্পর্কে জেনেছেন এবার বলার চেস্টা করবো মানসিক অবসাদের কারন নিয়ে ।  মানসিক অবসাদ অথবা ডিপ্রেশন হলো একটি মানসিক ত্রুটি বা সমস্যা। এই মানসিক অবসাদের মাধ্যমে মানুষের জীবনের উপর অনেক রকম ব্যাঘাত বা জীবনের ছন্দপতন হয়ে যেতে পারে। 


মানসিক অবসাদের কারণ কয়েকটি মাধ্যমে পরিলক্ষিত করা যায়। যেমন, জীবনের পরিবর্তন, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা এবং মানসিক চাপ। তবে একটি বিষয় লক্ষ্য করা উচিত যে, মানুষ ভেদে একেক জনের মানসিক অবসাদ একেক রকম হতে পারে। এটি ব্যক্তিবিশেষে হয়ে থাকে। 


মানুষের জীবনে নানা রকম পরিবর্তনের কারণে মানুষ মানসিক অবসাদে ভুগে থাকে যেমন, প্রিয়জনের বিয়োগ, পত্নী বিচ্ছদ, সন্তান পর হয়ে যাওয়া এবং কন্যা পিতা মাতার অবাদ্য। 


এই সব জীবনের পরিবর্তনের কারণে পরিস্থিতে পড়া ও হলো মানসিক অবসাদের কারণ। কারণ এই অবস্থা মানুষের জীবনের উপর নানা রকম প্রভাব ফেলে যা মানুষকে জীবনে ছন্দপতন এনে দেয়। 


এরপর হচ্ছে মানসিক চাপ, মানসিক চাপ হলো যেমন পারিবারিক সমস্যা, প্রিয়জনের অসুস্থতা, অর্থনৈতিক অভাব এবং কাজের চাপ এই সবকিছু হলো মানসিক অনসাদের কারণ। 


এই সমস্যাগুলি যখন আমাদের মধ্যে বিরাজমান থাকে তখন আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের হানি হয়, যা আমাদের জীবনের উপর প্রভাব ফেলে। তবে এই সমস্যাগুলি মানুষের মধ্যে বেশিরভাগ সময় দেখা যায়। 


এবার আসি সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা আপনাকে মানসিক অবসাদের স্বাদ গ্রহণ করাতে পারে। সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বলতে মানুষ যখন সমাজ বা পরিবার এমনকি বন্ধুবান্ধবের কাজ থেকে অবহেলায় ভুগে বা একাকী অবস্থায় জীবন যাপন করতে হয় তখন ও মানসিক অবসাদের কারণ হতে পারে।


কারণ তখন তিনি একাকিত্ব ভুগ করতে করতে মানসিক অবসাদে প্রতিনিয়ত ভুগে থাকেন। কারণ আমরা সামাজিক জীব সেহেতু আমরা একা জীবন ধারণ করতে আমাদের একটু বেগ পেতে হয়। 


তবে মানসিক অবসাদের কারণ আরো অনেক কিছু হয়ে থাকে। যেমন আপনার অনেক দিনের ইচ্ছে যা আপনি হৃদয়ে লালন করছেন সেই আশা যদি পূরণ না হয় তাহলেও মানুষ মানসিক অবসাদে ভুগে। 


আবার কেউ কেউ কোন প্রেমিকার সাথে দীর্ঘ দিনের সম্পর্কের পর না পাওয়ার পর ও মানসিক অবসাদে আচ্ছন্ন হয়। 

মানসিক অবসাদের লক্ষণ


মানসিক অবসাদ বা ডিপ্রেশনের নানা রকম রূপ থাকে যা ব্যক্তি বিশেষে একটু  ভিন্ন দেখা যায়। মানসিক অবসাদের লক্ষণ গুলির মধ্যে কিছু কিছু বিষয় বা চরিত্র প্রায় মিল আমরা খুঁজে পায়। আমরা বিশেষ করে সেই লক্ষণ গুলি একটু আলোচনা করবো যেন সহজে বুজতে পারি। 


  • মানসিক অবসাদের লক্ষণ গুলির মধ্যে সহসা হতাশ বা দুঃখ কষ্ট অনুভব করতে দেখা যায়। 
  • মানসিক অবসাদে বা ডিপ্রেশনে থাকলে কাজের প্রতি অবহেলা থাকে এমনকি কাজ করতে করতে ভুল কাজ ও করার সম্ভাবনা দেখা দেয় । 
  • কাজের প্রতি উদ্যমের অভাব পরিলক্ষিত করা যায়। 
  • অনিদ্রা দেখা দেওয়া ও মানসিক অবসাদের লক্ষণ। 
  • মাথাব্যথা ও হজমের সমস্যা পরিলক্ষিত হয়। 
  • খাবারের প্রতি আসক্তি কমে আসা এমনি ব্যক্তির প্রিয় খাদ্যের প্রতিও। 
  • ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্ভেগ উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। 
  • প্রায় সময় আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যায় আত্মবিশ্বাসের অভাবে। 
  • কোনো বিষয়ে সিদ্বান্তহীনতায় ভুগে। 
  • আবেগ অনুভব করার ক্ষমতা কমে যাওয়া। 

মনসিক অবসাদ বা ডিপ্রেশন হলে কি কি সমস্যা হয়


মানসিক অবসাদের স্বাদ প্রত্যেক মানুষ পেয়ে থাকে সময়ে সময়ে কিছু কারণে বা অকারণে। এই অবসাদ মনে হলেও শারীরিক ভাবে অনেক প্রভাব বিস্তার করে। এই ক্ষেত্রে আপনি জানেন কি মনসিক অবসাদ বা ডিপ্রেশন হলে কি কি সমস্যা হয়। চলুন তাহলে আমরা একটু জেনে আসি মানসিক অবসাদের সমস্যা গুলি নিয়ে। 


  • মানসিক অবসাদ মানুষের শরীরের শক্তি কমিয়ে দেয় এই কারণে খুব ক্লান্ত লাগে অল্প পরিশ্রমে। 
  • শরীরের ঘুমের চাহিদা বেড়ে যায় এবং সাথে অলসতা দেখা দেয় আবার কখনো কারো মধ্যে অনিদ্রার সমস্যা দেখা দেয়। 
  • মাথাব্যথা সৃষ্টি করে এবং মাইগ্রেনের উপর প্রভাব ফেলে। 
  • হজম শক্তির ব্যাঘাত ঘটায়। 
  • কখনো কখনো খিঁচুনি বা ব্যথা হতে পারে পেশিতে। 
  • ব্লাড প্রেশারের সমস্যা দেখা দিতে পারে। 
  • মুখে ব্রণের আবির্ভাব দেখা দেয়। 
  • যৌন চাহিদা কমিয়ে দেয়। 
  • ক্ষুদা মন্দ হয়ে যায়।
  • হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় বিশেষ করে যারা দীর্ঘদিন ধরে মানসিক অবসাদ বা 
  • ডিপ্রেশনে থাকে। 
  • স্মৃতিশক্তি দুর্বল করে দেয় ধীরে ধীরে। 

মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তির উপায়


মানসিক অবসাদের লক্ষণ নিয়ে কথা শুরু করে এখন আমরা অনেক দূরে চলে আসছি। মানসিক অবসাদ দুরারোগ্য ব্যাধির ন্যায় যা ধীরে ধীরে মানুষকে একজন জীবন্মৃত করে দিতে পারে। মানসিক অবসাদ বা ডিপ্রেশান থেকে উদ্বার হাওয়া খুবই কষ্টকর। কিন্তু কিছু উপায় জানলে অনেকাংশে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আজকে মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে আমরা জানবো। 


  • মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে নিয়মিত ব্যায়াম খুবই জরুরি যা ব্যায়ামের মাধ্যমে মানব শরীরের অঙ্গের মধ্যে এন্ডোরফিন নিঃসৃত করে মুড উন্নত করার কাজ করে। 
  • ভালো এবং সঠিকভাবে খাদ্যাভ্যাস চেষ্টা করুন যাতে করে শরীরে ও মনে প্রভাব ফেলে। 
  • সাথে পর্যাপ্ত পানি পান করুন। 
  • মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করুন এবং পরিবারের প্রিয় মানুষদের সাথে সময় কাটান। 
  • আপনার খুব কাছের মানুষ যাদের সাথে আপনার সমস্যার কথা বলা যায় তাদের সাথে সঙ্গ দিন। 
  • এমন বন্ধুর সাথে সময় দিন যারা আপনার জীবনে সামনে এগিয়ে যেতে সাহস এবং সহযোগিতা প্রদান করে। 
  • নিয়মিত ধ্যান এবং প্রাণায়াম করুন যা আপনার শরীরকে খুব সহজে রিলেক্স করে দেবে।  
  • মাঝের মধ্যে প্রকৃতিকে সময় দিন যেমন নদী, সাগর কিংবা পাহাড়। 
  • প্রতিদিন আকাশের দিকে কিছুক্ষন তাকান আকাশের বিশালতা নিজে উপলব্দি করুন। 
  • প্রয়োজনে মানসিক স্বাস্থ্যের ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নিন। 
  • সঙ্গীত অথবা খেলাধুলার মধ্যে নিজেকে একটু জড়িয়ে দিন। 


মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে উপরোক্ত বিষয়গুলি অনুসরণ করে চললে নিজেকে খুব সহজে পরিবর্তন করতে পারবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।  

মানসিক অবসাদের লক্ষণ নিয়ে লেখকের শেষ মন্তব্য


মানসিক অবসাদ মানুষের জীবনে কোন না কোন কারণ এসে যায় যা আমরা সবিস্তারে উপরে বর্ণনা করার চেষ্টা করেছি বিভিন্ন দিক থেকে। অবশেষে মানসিক অবসাদের লক্ষণ নিয়ে তেমন আর কিছু বলার আছে বলে আমার মনে হয় না।  তবে এই কোথায় শেষে বলবো মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি পেতে হলে সর্বদা সন্তুষ্ট থাকবেন যা আছে এবং যা পেয়েছেন তা নিয়ে। আর একটি কথা সেটি হচ্ছে সর্বদা পরিস্থিতিকে মেনে নেওয়ার মত সাহস নিয়ে চলুন। 


মানসিক অবসাদে ভুগছেন ! ছোট্ট ছোট্ট উপায়ে মুক্তি মিলবে

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪