শ্বেতী রোগের স্থায়ী চিকিৎসা | Vitiligo Disease
সূচীপত্রঃশ্বেতী রোগের স্থায়ী চিকিৎসা । দেখতে একদম দুধ সাদা রঙের মত টুকরো টুকরো লোকটিকে মনে হচ্ছে যেন কোন গরম জলে জ্বলসে গেছে । নাকি কোন অভিশাপে তার এই অবস্থা হয়েছে জানিনা । নাকি কোন বিশেষ কোন কারনে তার এই অবস্থা হয়েছে কে জানে । এতক্ষন যে কথাগুলি বলছিলাম এইগুলি হলো শ্বেতী রোগের কথা । দেখতে বিদগুটে হলেও খুব খারাপ লাগে ।
আজকে তাই এই শ্বেতী রোগের স্থায়ী চিকিৎসা সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করবো। সাথে শ্বেতী রোগ সম্পর্কিত শ্বেতী রোগ কেন হয়, শ্বেতী রোগ কি ভালো হয়, শ্বেতী রোগের প্রাথমিক লক্ষণ, শ্বেতী রোগ কি বংশগত এবং শ্বেতী রোগের এলোপ্যাথিক চিকিৎসা নিয়েও আমরা সার্বিক ভাবে কথা বলার চেষ্টা করবো আশা করি আপনাদের উপকারে আসবে সাথেই থাকবেন ।
শ্বেতী রোগ কি
এই শ্বেতী রোগকে ধবল রোগী ও বলে থাকে । অনেক মানুষের মধ্যে এই শ্বেতী রোগ দেখা যায় । দেখতে যদিও একটু অন্যরকম কিন্তু সাধারণ মানুষের ত্বক না হলেও ভয়ের কোন কারণ নেই। কারণ এই শ্বেতী রোগ কোন ছোঁয়াচে নই । আমরা এই আর্টিকেলে শ্বেতী রোগের স্থায়ী চিকিৎসা নিয়ে কথা বলবো কিন্তু তার আগে জানার দরকার শ্বেতী রোগ কি?
মানুষকে দীর্ঘমেয়াদি কোন সমস্যার সৃষ্টি হয় না বা প্রাণঘাতী কোন রোগ বহন করে না ভুক্তভোগী । শ্বেতী রোগ হলো একধরণের চর্ম রোগের মত। যিনি মেলানোসাইট রোগে আক্রান্ত হয়েছে তার মধ্যে এই শ্বেতী রোগ দেখা যায়।
ত্বকের কোন জায়গায় ত্বক রঞ্জকতা কমে গেলে অর্থাৎ মানুষের শরীরে কোন বিশেষ জায়গায় ত্বকের রং উৎপাদন কোষ যদি মরে যায় অথবা ত্বক রঞ্জকতার সংখ্যা কমে যায় তাহলে শরীরের সেই অংশে ত্বকের রং তৈরী বন্ধ হয়ে যায় এবং সেই অংশ সাদা হয়ে যায় । বিশেষ করে তাকে মেলানোসাইট রোগাক্রান্ত রোগী বলে থাকে এবং একেই শ্বেতী রোগ বলে ।
শ্বেতী রোগ কেন হয়
শ্বেতী রোগ দেখতে সাদা এবং মানুষের ত্বকের রঞ্জকতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে হয়ে থাকে । মেলানোসাইট রোগাক্রান্ত ও বলে থাকে । শ্বেতী রোগ কেন হয় অনেকে জানতে চাই । কারন এই রোগের বিশেষ কোন অবস্থা এবং সঠিক কারন এখনো জানা যাই নি ।
তবে আরও একাধিক কারনও এই রোগের সাথে জডিত বলে ধারনা করা হয় । শ্বেতী রোগকে অটোইমিউন রোগ বলে আখ্যায়িত করা হয় । শরীরের ইমিউন সিস্টেম নষ্ট হলে মেলানিন উৎপাদন কারী কোষগুলি খুবই ক্ষতিগ্রস্থতার কারনে ত্বকের রং উৎপাদন করতে ব্যর্থ হয় যার ফলে শরীরের এই শ্বেতী রোগ দেখা দেই ।
আরও অন্যান্য কারনে ও হয়ে থাকে । যেমন মানসিক দুশ্চিন্তা, সানবার্ন বা ত্বকের ক্ষতি এবং কিছু বাইরের রাসায়নিক পদার্থ ত্বকের ব্যবহারের ফলে ।
শ্বেতী রোগের প্রাথমিক লক্ষণ
শ্বেতী রোগ (Vitiligo) ভিটিলিগো ও বলে থাকে । এটি হলো ত্বকের রোগ, যেখানে ত্বকের নির্দিষ্ট অংশে বর্ন হরন হয়ে যায় এবং এতে সাদা দাগ দেখা যায় । শ্বেতী রোগের প্রাথমিক লক্ষণসমূহ তাড়াতাড়ি চিহ্নিত করতে পারলেই শ্বেতী রোগের স্থায়ী চিকিৎসা নেওয়া অনেকাংশে সহজ হয়ে যায় । তাই আমরা নিচে কিছু শ্বেতী রোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেওয়ার চেস্টা করছি ।
- দেহের অনেক অংশে হঠাৎ করে ফ্যাকাশে বা সাদা দাগের উতপত্তি হয় যেমন মুখ, হাত, পা এবং কনুইয়ে লক্ষ্য করা যায় ।
- অনেক সময় চুল, দাড়ি, ভ্রু এবং চোখের পাপড়ি পর্যন্ত ধূসর রং ধারন করে ।
- ঠোঁটের আশেপাশে বা মুখের কিছু অংশে রং হালকা হয়ে যাওয়া।
- হাঁটু, পায়ের আঙুল, হাত বা কনুই কাছে ত্বকের রং ধীরে ধীরে ফ্যাকাশে বা সাদা হয়ে যাওয়া ।
- অনেক জনের ক্ষেত্রে চোখের রং ও পরিবর্তন দেখা যেতে পারে।
শ্বেতী রোগ কি ভালো হয়
এক কথায় বলতে গেলে সম্পূর্ণরূপে নিরাময় করা যায় না এই শ্বেতী রোগকে । এই রোগের উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সম্ভব। মানুষের শরীরের মেলানিন উৎপাদনকারী কোষগুলি ধ্বংসের কারণে মানুষের মধ্যে এই শ্বেতী রোগের দেখা দেয়।
মেলানিন উৎপাদনকারী কোষগুলিকে সম্পূর্ণরূপে পুনরুদ্বার করা সম্ভব না হলে ও ত্বকের রং আংশিক ভাবে ফিরিয়ে আনা যায় কিছু চিকিৎসার মাধ্যমে। কিছু চিকিৎসাগুলির মধ্যে রয়েছে ইমিউনোথেরাপি, ফটোথেরাপি, স্টেরয়েড ক্রিম এবং অনেকক্ষেত্রে সার্জারির মাধ্যমে।
শ্বেতী রোগ কি বংশগত
অনেকের মধ্যে এই চিন্তায় মাথায় থাকে যে পরিবারের কারো শরীরে যদি এই শ্বেতী রোগ থাকে তাহলে কি অন্যান্যের মধ্যে ও ছড়াবে কিনা বা শ্বেতী রোগ কি বংশগত কিনা।
হ্যা শ্বেতী রোগ বংশগত ভাবে বিস্তার লাভ করে তবে মনে রাখতে হবে সবার ক্ষেত্রে একই না। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই শ্বেতী রোগকে বংশগত সমস্যায় নির্নয় করেছেন মাত্র ৬ শতাংশ।
অর্থাৎ এই শ্বেতী রোগ বংশগত ভাবে হয়ে থাকে ৬ শতাংশ। আর বাকিগুলি তার নিজের শরীরের মেলানিন সমস্যার কারণে হয়ে থাকে তারমানে নিজের শরীরের সাদা দাগ তৈরি করে থাকে।
শ্বেতী রোগের এলোপ্যাথিক চিকিৎসা
শ্বেতী রোগের কিছু এলোপ্যাথিক চিকিৎসা বর্তমানে ও হয়ে থাকে। এলোপ্যাথিক চিকিৎসা দ্বারা ত্বকের রং পুনরুদ্বারের জন্যে করা হয় তার সাথে শ্বেতী রোগ যেন আর বাড়তে না পারে তার জন্যে চিকিৎসা করা হয়। এলোপ্যাথিকের পাশে কিছু থেরাপি ও ব্যবহৃত হয়।
কিছু এলোপ্যাথিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে ক্রিম প্রয়োগ করা যেতে পারে। যেমন টপিকাল স্টেরয়েড বা ইমিউনোডিপ্রেসেন্ট ক্রিম ব্যবহার করা যায়। কারণ এই ক্রিমগুলি ত্বকের মেলানিন উৎপাদন করতে খুবই সহায়ক এবং ত্বকের প্রদাহ কমিয়ে আনে।
এবার আসি থেরাপি নিয়ে। শ্বেতী রোগে থেরাপি ও খুবই কার্যকরী যেমন, ফটোথেরাপি বা আলোকচিকিত্সার মাধ্যমে ত্বকের মেলানিন পুনরুদ্বারের চেষ্টা করা হয়। যা আলোর অতিবেগুনি রশ্মি দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ ত্বকের জায়গায় এই থেরাপি দেওয়া হয়। বেশ কয়েকটি সেশনের পর এই থেরাপির মাধ্যমে ত্বকের বর্ণ ফিরিয়ে সম্ভব।
সার্জারির মাধ্যমে ও কিছুটা সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। যেমন সিস্টেমিক স্টেরয়েড ব্যবহার করে শরীরের যে অংশের ত্বক সুস্থ রয়েছে সেখানে মেলানোসাইট কোষ গুলি নিয়ে আক্রান্ত স্থানে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এই সার্জারি করা হয়।
শ্বেতী রোগের হোমিও ঔষধ
শ্বেতী রোগের জন্যে মানুষ কতকিছু না করছেন। শ্বেতী রোগের স্থায়ী চিকিৎসা জন্যে অনেকে হন্য হয়ে বেড়াচ্ছে । কিন্তু স্থায়ী চিকিৎসা হোমিও ঔষধের মধ্যে নিহিত রয়েছে সেটা অনেকের বুদ্ধির অগোচর ।
শ্বেতী রোগের হোমিও ঔষধ গুলির উপর অনেকের আবার নির্ভরতা ও জনপ্রিয়তা বেশি। কারণ হোমিও চিকিৎসা মানুষের সমস্যার মূল কারণ গুলি একদম গভীর থেকে অনুধাবন করে নিরাময়ের চেষ্টা করা হয়।
আমরা কিছু শ্বেতী রোগের হোমিও ঔষধ নিচে দেওয়ার চেষ্টা করছি যেগুলি আসলেই খুব বেশি কার্যকরী।
- Arsenicum Sulphuratum Flavum
- Silicea
- Sulphur
- Calcarea Carbonica
এই হোমিও ঔষধের বেশ উপকারী দিক হচ্ছে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই নগন্য। এবং সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে এই হোমিও ঔষধ গুলি তৈরী হয়। রোগীর অবস্থার উপর নির্ভর করে এই হোমিও চিকিৎসা পদ্বতিগুলি হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে ভালো অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়া জরুরি।
শ্বেতী রোগের স্থায়ী চিকিৎসা নিয়ে লেখকের শেষ মন্তব্য
শ্বেতী রোগের স্থায়ী চিকিৎসা নিয়ে আমরা এতক্ষন অনেক কিছু বলার চেস্টা করেছি । শ্বেতী রোগের স্থায়ী কোন সমাধান এই পর্যন্ত পাওয়া যায় নি । তবে সঠিক ভাবে এলোপ্যাথিক, হোমিওপ্যাথিক ঔষধ এবং চিকিৎসা নিলে শ্বেতী রোগের অগ্রগতি অনেকাংশে কমিয়ে আনা যায়। তবে সার্জারী মাধ্যমে ও অনেকের উপকার হচ্ছে বলে প্রমান মিলেছে ।
শ্বেতী রোগ থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url