কোলন ক্যান্সার থেকে বাঁচার উপায় । কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ ও প্রতিকার
সূচীপত্রঃকোলন ক্যান্সার থেকে বাঁচার উপায় | ক্যান্সার শব্দটি শুনলেও কেমন জানি অকপটে মনের মধ্যে আতঙ্ক এসে ভর করে। তারপর ও সচেতনতার জন্যে ক্যান্সার সমূহের সম্পর্কে আমাদের জানা দরকার। বিভিন্ন ক্যান্সারের মধ্যে কোলন ক্যান্সার থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে আমরা জানবো । কারণ অতি গোপনে ক্যান্সারের জীবাণু দেহের মধ্যে আমরা বহন করে থাকলে যাতে সিমটম গুলি জেনে আমরা বুজতে পারি যে কোলন ক্যান্সার সম্পর্কে ।
তার সাথে আমরা জানবো কোলন ক্যান্সার কি,কোলন ক্যান্সার বোঝার উপায়, কোলন ক্যান্সারের ব্যাথা, কোলন ক্যান্সার কি ভাল হয়, কোলন ক্যান্সার থেকে বাঁচার উপায়, কোলন ক্যান্সার কোথায় হয়, কোলন ক্যান্সার অপারেশন খরচ বাংলাদেশ, অস্ত্রোপচার ছাড়াই কি কোলন ক্যান্সার নিরাময় করা যায় এবং কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ ও প্রতিকার এই সমগ্র বিষয় নিয়ে থাকছে আজকে কলাম। তাই সাথেই থাকবেন অজানাকে জানা হয়ে যাবে আশা করি ।
কোলন ক্যান্সার কি
কোলন ক্যান্সার নামটি শুনলে যেন গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে। কিন্তু কোলন ক্যান্সার কি কোথায় হয় অনেকে জানেনা। এছাড়াও কোলন ক্যান্সার সম্পর্কে জানা থাকলে অনেকটা সচেতন হওয়া যায় ।
কোলন ক্যান্সার এক ধরণের ক্যান্সার যেটিকে বৃহদান্ত্রের ক্যান্সার হিসেবে বলা হয়ে থাকে। কোলন হজমের প্রক্রিয়াতে ভূমিকা পালন করে থাকে। কোলন ক্যান্সার হচ্ছে মলদ্বারের জায়গায় এবং এপেন্ডিক্সের জায়গায় হয়ে থাকে ।
প্রথমে সাধারণভাবে মলদ্বারের জায়গায় পলিপ রূপে ছোট ছোট অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি হয়ে তারপর সময়ের সাথে সাথে রূপ পাল্টিয়ে কোলন ক্যান্সারের পরিণত হয় ।
কোলন ক্যান্সার বোঝার উপায়
- মলত্যাগের সময় রক্তপাত এবং মলে রক্তের চিহ্ন দেখা যায়
- ওজন কমে যাওয়া অস্বাভাবিক ভাবে
- কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা দেখা দেয়
- খুবই ক্লান্তির লক্ষণ দেখা দেয়া
- ডায়রিয়ার মত দীর্ঘস্থায়ী পরিপাক সমস্যা কোলন ক্যান্সারের ইঙ্গিত হতে পারে
- পেটের ফোলাভাব দেখা যাওয়া
কোলন ক্যান্সারের ব্যাথা
এই আর্টিকেলটি কোলন ক্যান্সার থেকে বাঁচার উপায় হলেও আগে কোলন ক্যান্সারের কিছু বিষয় আমাদের জানা দরকার। যেমন কোলন ক্যান্সারের ব্যথা, কোলন ক্যান্সার বোঝার উপায় এই বিষয়গুলি।
কোলন ক্যান্সার হলে শুরুর দিকে তেমন তীব্রভাবে ব্যথার অনুভব না হলেও ধীরে ধীরে সময়ের সাথে বাড়তে থাকে না। পরিপাক তন্ত্রের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অংশ বৃহদান্ত্রের মধ্যে তৈরি হয় এই কোলন ক্যান্সার।
যখন ক্যান্সারের টিউমার ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাই তখন ব্যথার মাত্রাও বাড়তে থাকে কারণ এই সময় পেটের ভিতরে চাপ বাড়তে থাকে। এই ব্যথা কখনো হালকা অস্বস্তির সৃষ্টি করে এবং পরে তা বাড়তে থাকে।
মলত্যাগের সময় ও অসম্ভব ব্যথার তৈরী হয় যখন কোষ্টকাঠিন্য হয়। পেট ফুলে গিয়ে অসম্ভব ব্যথার তৈরী হয়।
কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ ও প্রতিকার
কোলন ক্যান্সার হলেও অনেক সময় আমরা বুঝতে পারি না। কেননা অনেকের মধ্যে পাইলস এর সমস্যা হয়ে থাকে। যার কারণে বুঝতে কষ্ট হয়ে পড়ে । তাই কোলন ক্যান্সার থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে জানার পূর্বে আমরা কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আমরা জেনে আসি চলুন।
কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ
- অনিয়মিত মলত্যাগ হলে অর্থাৎ কোষ্টকাঠিন্য বা ডায়রিয়ার মত সমস্যা হলে মনে করা হয় কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ।
- মলত্যাগের সময় রক্তের অবস্থা পরিলক্ষিত করুন। কোলন ক্যান্সার হলে মলের সাথে যে রক্ত বের হয় তা কালচে ভাব দেখা যায়।
- অস্বাভাবিক ভাবে ওজন কমে যাওয়া ও কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
- পেটে ফোলাভাব সাথে অস্পষ্ট পেটে ব্যথা কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
- প্রায় সময় দুর্বলতা অনুভব হওয়া।
কোলন ক্যান্সারের প্রতিকার
- কোলন ক্যান্সারের প্রতিকারের প্রথম ধাপ হচ্ছে কোলোনস্কোপি করা।
- পরীক্ষার পর যদি দেখা যায় যে কোলন ক্যান্সারের কোষ রয়েছে তাহলে সেগুলি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সরিয়ে ফেলা।
- ক্যামোথেরাপি দেওয়া যায় যেন কোলন ক্যান্সারের কোষগুলি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়।
- লাইফস্টাইলের পরিবর্তন বাঞ্চণীয় যেমন বিশেষ করে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার গুলি খেতে হবে। ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকা এবং সাথে নিয়মিত শারীরিক ব্যায়ামের সাথে যুক্ত থাকা।
কোলন ক্যান্সার কি ভাল হয়
কোলন ক্যান্সার নিয়ে অনেকে উদ্ভিগ্ন। কারণ আমাদের বাংলাদেশের প্রায় মানুষের মধ্যে মসলা জাতীয় খাবারের প্রবণতা বেশি তাই মলদ্বারের পলিপ প্রায় মানুষের মধ্যে দেখা দেয়।
এই মুহূর্তে আপনার যদি পলিপ বা পাইলসের সমস্যা থাকে তাহলে এখনই সতর্ক হওয়ার বেশি দরকার। কোলন ক্যান্সার কি ভাল হয় এটি একটি প্রশ্নবোধক কথা হলেও এর ব্যথা আমরা দেওয়ার চেষ্টা করবো ধীরে ধীরে।
কোলন ক্যান্সার ভালো হয় প্রাথমিক অবস্থায়। অবস্থা যখন বেশি জঠিল হয়ে যায় তখন আর হাতের নাগালে থাকে না। তবে কখন কোলন ক্যান্সার ভাল হয় সেই সম্পর্কে একটু বিশদ ভাবে জেনে আসি।
কোলন ক্যান্সারের প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ভালো চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো হওয়ার পথ রয়েছে। এই সময় কোলন ক্যান্সার প্রথম অবস্থায় চিহ্নিত করা হলে এটি সম্পূর্ণ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মূলত, রোগটি যত তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে, ততই চিকিৎসার সফলতা আসার সম্ভবনা বেশি।
কোলন ক্যান্সার পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পায়, ফলে শুরুর দিকে রোগটি নির্ণয় করা গেলে, সার্জারি, কেমোথেরাপি, এবং রেডিয়েশনের মাধ্যমে ক্যান্সার একদম দূর করা সম্ভব হতে পারে।
প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসা সবচেয়ে বেশি সুফল পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দ্বারা অপারেশনের দ্বারা টিউমার এবং ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো সরিয়ে ফেলা হয়, এটি রোগীর সুস্থতার দিকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যায়।
তবে প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থার পরের পর্যায়গুলিতে ক্যান্সারে চিকিৎসা জটিল আকার ধারণ করতে পারে, কারণ তখন ক্যান্সারের কোষগুলি শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে।
তবে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার এগিয়ে যাওয়ার ফলে ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং জীবনমান উন্নত করার উপায়ও রয়েছে । এছাড়াও প্রতিরোধ করার নিমিত্তে নিয়মিত কোলনস্কোপি করা, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ এবং শারীরিক সক্রিয়তা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
এই পরীক্ষা এবং খাওয়া দাওয়া যদি নিয়মিত এবং সুস্থতার সহিত করা যায় তাহলে প্রাথমিক পর্যায়ে কোলন ক্যান্সার থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
কোলন ক্যান্সার থেকে বাঁচার উপায়
প্রথমে পাইলসের সমস্যা হলে বা মলদ্বারে পলিপ বা গোটার আবির্ভাব হলেই মানুষ খুব উদ্ভিগ্ন হয়ে পড়ে যে কোলন ক্যান্সার থেকে বাঁচার উপায় কি কারণ তখন কোলন ক্যান্সার নিয়ে একটি ভয় এসে যায় এবং আরো অনেক কিছু ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা থেকেই যায় যে এই রোগ কোথায় হতে কোথায় নিয়ে যায়।
তবে কোলন ক্যান্সার থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে আমরা বলার চেষ্টা করছি সাথেই থাকুন দয়া করে। কারণ কোলন ক্যান্সার খুব ছোট খাট রোগ নোই এটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারা একটি রোগ। তাহলে চলুন কোলন ক্যান্সার থেকে বাঁচার উপায় গুলি জানার চেষ্টা করি।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
নিত্যদিনের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন আনার দরকার যেমন প্রতিদিনের খাবারের মধ্যে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার গুলি খাওয়া জরুরি কারণ এই খাবার গুলি আপনাকে কোলন ক্যান্সার থেকে বাঁচতে সহায়তা করবে। যেমন, ফল, শাকসবজি, ব্রোকলি, গাজর, আপেল, ওটস এবং বাদাম। তবে মাংস জাতীয় খাদ্য ঠিক নিজেকে দূরে রাখবেন।
নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম
নিয়মিত শরীর চর্চা বা শারীরিক ব্যায়াম কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে বাঁচতে সহোযোগীতা করবে। তাই প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট পর্যন্ত ব্যায়াম করুন না হলে হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন। অথবা সাইক্লিং করতে পারেন।
ওজন নিয়ন্ত্রণ
অতিরিক্ত ওজন মানুষের শরীরের কোলন ক্যান্সারের জন্যে ঝুঁকি হতে পারে অনেকগুন। ওজন কমার ক্ষেত্রে একটু সতর্কতা থাকতে হবে।
ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করা
ধূমপান ও মদ্যপান কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলে তাই এই ধূমপান ও মদ্যপান থেকে নিজেকে বিরত রাখা উচিত।
ভিটামিন ও মিনারেল জাতীয় খাবার খাওয়া
ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে। সঠিক ডায়েটের মাধ্যমে এই পুষ্টিগুলো গ্রহণ করা উচিত।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা কোলন ক্যান্সার থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে কাজ করে। ৫০ বছরের উর্ধে হলেও নিয়মিত কোলনস্কোপি পরীক্ষা করা জরুরি। এতে করে খুব দ্রুত কোলন ক্যান্সার শনাক্ত হয় এবং নিরাময় করে কোলন ক্যান্সার থেকে বাঁচা যায়।
পারিবারিক ইতিহাস
কোলন ক্যান্সার পূর্বে যদি বংশগত ভাবে হয়ে থাকে তাহলে আপনার ও হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে তাই আগেভাগে পরিবারের ইতিহাস জেনে সঠিকভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করলে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
কোলন ক্যান্সার কোথায় হয়
অনেকে জানেনা যে কোলন ক্যান্সার কোথায় হয়। অনেকে মনে করেন এটি পেটের মধ্যে হয়ে থাকে। আসলে এই কোলন ক্যান্সার হচ্ছে মলদ্বারের একটি রোগ। যা ধীরে ধীরে ক্যান্সারে রূপ নেয়।
মানব শরীরের বৃহদান্ত্রে (কোলন) হয়। এটি পরিপাক তন্ত্রের শেষঅংশে একদম যাকে মলদ্বারের গোড়ায় হয়ে থাকে। এটি প্রথমে অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধি থেকে ছোট পলিপ আকারে হয়ে এটি পরে কোলন ক্যান্সার আকারে পরিণত হয়। এটি এপেন্ডিক্সের অংশেও হয়ে থাকে ।
কোলন ক্যান্সার অপারেশন খরচ বাংলাদেশ
কোলন ক্যান্সার হলেই মানুষের মধ্যে খরচের একটি চিন্তা থাকে। তাই এই আর্টিকেলে কোলন ক্যান্সার অপারেশন খরচ বাংলাদেশে কত হতে পারে সেই নিয়ে আমরা আলোচনা করবো।
ক্যান্সার হলেই ক্যামোথেরাপির এবং রেডিওথেরাপির একটি ব্যাপার আছে। কারণ ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ক্যামোথেরাপি একটি আশার আলো। তাই শুধু অপারেশন নই অপারেশেনর পরবর্তী রেডিওথেরাপি ও ক্যামোথেরাপি দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। এই থেরাপির ও অনেক খরচ পাতি রয়েছে।
তবে কোলন ক্যান্সার অপারেশন খরচ বাংলাদেশ এ সব মিলিয়ে রেডিওথেরাপি ও ক্যামোথেরাপি সহ প্রায় ৮ থেকে ৯ লাখ পর্যন্ত খরচ হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা বলে থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ছাড়িয়ে যেতে পারে ।
কোলন ক্যান্সার থেকে বাঁচার উপায় নিয়ে শেষ কথা
কোলন ক্যান্সার থেকে বাঁচার উপায় নিয়ে আমরা ধরে ধরে কোলন ক্যান্সারের অনেক কিছুর দিক তুলে ধরেছি। তাই নিজের জীবনের পরিবর্তন এবং খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন আনলে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের মধ্যে ও আপনি কোলন ক্যান্সার থেকে বাঁচতে পারবেন এর পরে একটু সমস্যা দেখা দেয়। তাই সাবধানতার সহিত লক্ষণ গুলি দেখলে দেরি না করে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন এবং নিজের সুস্থতা বজায় রাখুন। মনে রাখবেন স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url