গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তির উপায় এবং গ্যাস্ট্রিক আলসার হলে কি করা উচিত


গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তির উপায়


সূচীপত্রঃগ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তির উপায়। গ্যাস্ট্রিক নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুব কষ্টদায়ক। প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের মধ্যে গ্যাস্ট্রিক কোন না কোন কারণে দেখা দেয়। এটি যখন অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পাই তখন এটি নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না। আজকের আমাদের খবর হচ্ছে গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে। শুধু গ্যাস্ট্রিক আলসার নই এর আদ্যোপান্ত সম্পর্কে আমরা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করবো ।  

যেমন, গ্যাস্ট্রিক আলসার কাকে বলে, গ্যাস্ট্রিক আলসার কেন হয়, গ্যাস্ট্রিক আলসারের লক্ষণ কি, গ্যাস্ট্রিক আলসারের চিকিৎসা, গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তির উপায়, গ্যাস্ট্রিক আলসার হলে কি করা উচিত এবং গ্যাস্ট্রিক আলসার হলে কি কি খাওয়া নিষেধ এই সম্পূর্ণ বিষয় নিয়ে আমরা একটি আলোচনা সাজিয়েছি যা মানব কল্যাণের জন্যে একটি বার্তা হতে যাচ্ছে । 

গ্যাস্ট্রিক আলসার কাকে বলে


গ্যাস্ট্রিক মানে হলো অম্বল আর আলসার মানে হলো ক্ষত বা বাংলায় যাকে ঘা বলে থাকি। গ্যাস্ট্রিক আলসার প্রায় মানুষের মধ্যে দেখা যায়। এটি হলো পেপটিক আলসারের পূর্ব নাম। গ্যাস্ট্রিক আলসার কাকে বলে চলুন একটু জেনে আসি।

গ্যাস্ট্রিক আলসার পলাস্থলীতে থাকা ক্ষুদ্রান্ত্রের ভিতরে ক্ষত অবস্থাকে গ্যাস্ট্রিক আলসার বলে। যা ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম অংশে ঘটে থাকে। পাকস্থলীর অ্যাসিড যখন ক্ষুদ্রান্ত্রের ভিতরে আস্তরণের মধ্যে ক্ষতের সৃষ্টি করে তখন তাকে গ্যাস্ট্রিক আলসার বলে থাকে। 


কারণ অ্যাসিড হচ্চে ক্ষারীয় যা অনেক সময় অনেক কারণে ক্ষুদ্রান্ত্রের ভিতরে ক্ষতের তৈরী করে থাকে। তাছাড়াও খাদ্যের অনিয়মতা ও আরো বিবিধ কারণে হতে পারে। আমরা গ্যাস্ট্রিক আলসার কেন হয় তা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানবো।

গ্যাস্ট্রিক আলসার কেন হয়


গ্যাস্ট্রিক আলসার বা পেপটিক আলসার যেহেতু প্রায় মানুষের মধ্যে দেখা দেয় সেহেতু আপনার ও জেনে রাখা দরকার। কারণ আপনিও কোনদিন এই গ্যাস্ট্রিক আলসার এর শিকার হয়ে বসে  থাকেন। তাই আজকে আমরা গ্যাস্ট্রিক আলসার কেন হয় তা সম্পর্কে একটু জেনে আসব । 



একপ্রকার ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে। আর সেই ব্যাকটেরিয়ার নাম হলো হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি । এই ব্যাকটেরিয়ার যখন সক্রমণ হয় তখন পাকস্থলীর সেই আস্তরণ কে খুব দুর্বল করে দেই যা এসিড পরবর্তীতে আস্তরনে ক্ষতের তৈরী করে। 


কিছু ঔষধ নিয়মিত সেবনের কারনে ও হয়ে থাকে যেমন আইবুপ্রোফেন ও  এসপিরিন। এই ঔষধগুলি হলো নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগস । 


নিয়মিত মদ্যপানে ও গ্যাস্ট্রিক আলসার হতে পারে । 


ধুমপান পাকস্থলীর রক্ত সঞ্চালন কে কমিয়ে দিয়ে হিলিং প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করে তাই অত্যধিক ধুমপান করার কারনে ও গ্যাস্ট্রিক আলসার হতে পারে ।


অতিরিক্ত মশলা জাতীয় খাদ্যভাস গ্যাস্ট্রিক আলসারের কারন হতে পারে । 

অত্যাধিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার গ্যাস্ট্রিক আলসারের জন্যে ও দায়িত্ব ।

মানসিক চাপ থাকলেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে । 

গ্যাস্ট্রিক আলসারের লক্ষণ কি


অনেক সময় আমরা গ্যাস্ট্রিকের আলসার হলেও আমরা বুজতে পারি না । পেটের মধ্যে ব্যথা অনুভব হলে সাধারন কিছু গ্যাসের ঔষধ খেয়ে হয়ত ব্যথা নিবারন করি । যা ভবিষ্যতে আপনাকে একটি কঠিন রোগের মধ্যে পতিত করতে পারে । কিন্তু  এই গ্যাস্ট্রিক আলসারের লক্ষন গুলি সম্পর্কে জানা থাকলে সেই ভয় আর থাকবেনা এবং আমরা সচেতন হতে পারবো।


  • পেটের মধ্যে তীব্র ব্যথা বা ধিক ধিকানো ব্যথা অনুবভ হওয়া ।
  • খালী পেটে থাকলে অথবা খাওয়ার পর ব্যথা বেড়ে যেতে পারে ।
  • গ্যাস্ট্রিক আলসার থাকলে অনেক সময় বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে । কখনো আবার বমির সাথে রক্ত ও দেখা দেয় ।
  • লোভবনীয় খাবার দেখলেও অনেক সময় অনিচ্ছা দেখা দেওয়া ।
  • অতিরিক্ত ঢেকুরের উঠা ।
  • ওজন হ্রাস হওয়া ।
  • খাবার খাওয়ার পর অস্বস্তি দেখা দেওয়া 
  • স্টুলে কালো রঙের রক্ত দেখতে পাওয়া যেতে পারে।


উপরোক্ত লক্ষন গুলি সাধারনত গ্যাস্ট্রিক আলসারের হয়েছে বলে মনে করে থাকে । তাই এই লক্ষন গুলি যদি দেখা দেয় তাহলে আর দেরি না করে গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তির উপায় এর জন্যে অতিরসত্তর একজন গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিশেষজ্ঞর কাছে দারস্থ হওয়া জরুরি হিসেবে ধরা হয় । 

গ্যাস্ট্রিক আলসারের চিকিৎসা


গ্যাস্ট্রিক আলসারের সমস্যা যখন দেখা দেয় তখন সতর্কতার সাথে এই সমস্যা সমাধান করার মাধ্যমে খুঁজে দরকার। না হলে এটি গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারে পরিণত হতে পারে। তবে সুচিকিৎসা এবং লাইফস্টাইলের পরিবর্তনের মাধ্যমে গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 


গ্যাস্ট্রিক আলসারের চিকিৎসা সম্পর্কে বলতে গেলে কিছু ঔষধের কথা বলা যায়।  যেমন প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর সেবন করা যেতে পারে। এই ঔষধ সাধারণত পাকস্থলীর অ্যাসিড উৎপাদন ক্ষমতা কমানোর জন্যে ব্যবহৃত হয়। 


তাছাড়াও অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যেতে পারে। কারণ যে হেলিকোব্যাক্টরি পাইলোরি ব্যাকটেরিয়ার কারণে এই সমস্যা দেখা দেয়, সেই ব্যাকটেরিয়ার প্রাদুর্ভাব দূর করার জন্যে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যায়। 


পাকস্থলীর অ্যাসিড হ্রাস করার জন্যে H2 রিসেপ্টর ব্লকার চিকিৎসার ক্ষেত্রে দেওয়া যেতে পারে।


অ্যান্টাসিড খুবই উপকারী তাৎক্ষণিক ব্যথা ও জ্বালাপোড়ার জন্যে, পাকস্থলীর অ্যাসিড নিরপেক্ষ করে অস্থায়ী স্বস্তি দেয়।


তারপর ও আমাদের দৃষ্টিতে এটি আমরা বলে থাকি যে, গ্যাস্ট্রিকের আলসার যদি হয়ে থাকে তাহলে এই সব ঔষধ গুলি খাওয়ার আগে অবশ্যই একজন ভালো বিশেষজ্ঞের কাছে পরামর্শ করা জরুরি। 

গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তির উপায়


গ্যাস্ট্রিক আলসার আমাদের মধ্যে অনেক সময় মনের অসচেতনতার কারনে ও হয়ে থাকে। এই গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে আমরা কিছু কাজ করতে পারি । যেগুলি আমাদের গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে অনেক স্বস্তি দিবে বলে আমরা মনে করি। 


  • খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন করা জরুরী গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে। 
  • ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে। 
  • মদ্যপান গ্যাস্ট্রিক আলসারকে ফাঁপিয়ে তুলে তাই মদ্যপান থেকে দূরে থাকা জরুরি। 
  • অতি মশলাযুক্ত, তৈলাক্ত, অ্যাসিডিক এবং বাসি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যে। 
  • মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকা জরুরি। 
  • বেশি খাওয়ার না খেয়ে অল্প অল্প করে খাওয়া খুবই উপকারী গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যে। 
  • গ্যাসের সমস্যা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া খুবই দরকার এতে কোনো ধরণের সমস্যা অবহেলা করা যাবেনা।  

গ্যাস্ট্রিক আলসার হলে কি করা উচিত


অনেকে গ্যাস্ট্রিক আলসারের সমস্যায় পড়লে সহজে বিভ্রান্তিতে পড়ে বা উপায় খঁজে যে, গ্যাস্ট্রিক আলসার হলে কি করা উচিত? মনে রাখা জরুরি যে গ্যাস্ট্রিক আলসার এমন কোন গুরুতর রোগ নই যে সুস্থ না হয়ে মানুষ থাকে না। 


সঠিক ভাবে যত্ন এবং নিয়ম মেনে জীবন ধারণ করলে গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তি পাওয়া যায় । সঠিক পরিচর্যা এবং মানসিক সাহসিকতাই হলো এই গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তির উপায় । আমরা গ্যাস্ট্রিক আলসার হলে কি করা উচিত সেই বিষয়গুলি একটু দেখে আসি। 


  • একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত ।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী যতাযত ভাবে ঔষধ গ্রহণ করা। 
  • স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন ও কম মশলাযুক্ত খাবার গ্রহণ করা জরুরি। 
  • পর্যাপ্ত পানি পান করা খুবই প্রয়োজন। 
  • সমস্ত অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় এড়িয়ে চলা। 
  • সঠিক সময়ে খাবার গ্রহণ করা। 
  • রাত না জাগা এবং সঠিক সময়ে ঘুমিয়ে পড়া। 
  • যোগব্যায়াম এবং ধ্যানে মন দেওয়া। 


এই পদক্ষেপ গুলি আপনাকে খুবই সহজে উদ্বার করবেন গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যে। তবে মনে রাখবেন অসংযমী জীবন যাপন আপনার এই সমস্যা কে আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারে পরিণত হতে পারে।    

গ্যাস্ট্রিক আলসার হলে কি কি খাওয়া নিষেধ


গ্যাস্ট্রিক আলসারের সমস্যা গুলি হলে আমাদের মধ্যে খাদ্যের কিছু পরিবর্তন আনা দরকার। যে খাবার গুলি খেলে আমাদের মধ্যে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা গুলি সহজে দূর করতে পারি । 


গ্যাস্ট্রিক আলসার হলে কি কি খাবার খাওয়া নিষেধ । এই কথা গুলি সহজে অনেকে প্রশ্ন করেন গুগলে এসে। তাই আমরা একটু আলোচনার করার চেষ্টা করবো কি কি খাবার গুলি এড়িয়ে চলা বা খাওয়া নিষেধ । 


  • ঝাল মরিচ, গরম মসলা এবং যেকোনো মসলা জাতীয় খাবার খাওয়া নিষেধ গ্যাস্ট্রিক আলসার হলেই। 
  • লেবু, টমেটো এবং লেবু জাতীয় অ্যাসিডিক খাদ্য খাওয়া নিষেধ কারণ এতে অ্যাসিডের পরিমান থাকে অনেক, তাই এইগুলি গ্যাস্ট্রিকের আলসারের ক্ষতি করতে পারে। 
  • ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় নিষেধ তারমধ্যে হলো চা, কফি এবং সফট ড্রিংক এইগুলি গ্যাস্ট্রিকের আলসারের বৃদ্ধির প্রধান কারণ। 
  • বাইরের খাবার যেমন তেলে ভাজা খাবার খাওয়া একদম নিষেধ।  
  • কার্বোনেটেড ও সোডা জাতিয় পানীয় খাওয়া নিষেধ এইগুলি আলসারের আরো ক্ষতের তৈরী করে। 
  • প্রিজারভেটিভস এবং অ্যাডিটিভস সমৃদ্ধ প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলো আলসারকে উত্তেজিত করতে পারে।

গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে শেষ কথা


গ্যাস্ট্রিক আলসার আমাদের দেশ অনেক মানুষ রয়েছে তাই এই সমস্যা নিয়ে এতো বেশি বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। তবে গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে সঠিক ভাবে চিকিৎসা এবং সচেতনতার সহিত উপরের নিয়ম গুলি পালন করলেই আপনি খুব তাড়াতাড়ি এই গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে উদ্বার হতে পারবেন বলে আমাদের ধারণা। তাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং নিজের খেয়াল রাখবেন নিজেকে ভালোবাসবেন । 


গ্যাস্ট্রাইটিস ডায়েট: খাবার খাওয়া এবং এড়িয়ে চলা


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪