রাসেলস ভাইপার সাপ Russell's Viper বা চন্দ্রবোড়া সাপ কামড়ালে কি হয়
সূচীপত্রঃরাসেলস ভাইপার সাপ Russell's Viper বা চন্দ্রবোড়া সাপ কামড়ালে কি হয় - সাপ ভীতিসৃষ্টিকারী একটি প্রাণী । শুধু ভীতি নয় প্রতিদিন এই সাপের কামড়ে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। এর মধ্যে আবার রাসেলস ভাইপার সাপ বা চন্দ্রবোড়া সাপ নিয়ে মানুষ এখন খুব আতংকিত ।
সম্প্রতি অনেক মানুষের মারা যাওয়ার পিছনে রাসেলস ভাইপার সাপ Russell's Viper বা চন্দ্রবোড়া সাপ কামড়ানোকে দায় করছেন অনেকে । তাই আজকে আমরা রাসেলস ভাইপার সাপ Russell's Viper বা চন্দ্রবোড়া সাপ কামড়ালে কি হয় সেই নিয়ে তথ্য থাকছে ।
রাসেলস ভাইপার সাপ Russell's Viper বা চন্দ্রবোড়া সাপ
এর শরীর বেশ মোটা এবং লেজের দিকে সরু হয়ে থাকে। দেখতে অজগরের মত লাগলেও মোটেও অজগর বলে ভুল করবেন না। মুখ চ্যাপ্টা এবং ত্রিভুজ আকৃতি। চোখগুলি বড় হয় এবং খুবই বিষাক্ত প্রজাতির সাপ।
মানুষের মাঝে চন্দ্রবোড়া নাম থাকলেও এখন রাসেল ভাইপার নাম খুবই পরিচিত হয়েছে । এই সাপের বিষ থেকে বাঁচানো খুবই দুঃসাধ্য একটি ব্যাপার ।
আরও পড়তে পারেনঃ সমুদ্র পৃষ্টের উচ্চতা বৃদ্ধির কারন কি
রাসেলস ভাইপার সাপ কেন ভয়ংকর ও মৃত্যুদূত
রাসেলস ভাইপার সাপ বা চন্দ্রবোড়া সাপ ভয়ংকর হওয়ার কারণ হচ্ছে এই সাপ এক সেকেন্ডের ১৬ ভাগের এক ভাগের মধ্যে শরীরে বিষ প্রয়োগ করতে সক্ষম । এই সাপের মধ্যে অন্য সাপের মত গুন্ নেই ।
যেমন অন্য সাপ কাউকে কামড়ালে পালিয়ে যায় । বাংলার চন্দ্রবোড়া সাপ বা রাসেলস ভাইপার সাপ কাউকে কামড়িয়ে পালিয়ে যায় না বা ফুস ফুস শব্দ ও করে না । কিন্তু খুব বিরক্ত হলে প্রেসার কুকারের মত করে হিস্ হিস্ শব্দ করতে থাকে ।
এই রাসেলস ভাইপার বাংলার চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া বলে থাকে অনেকে। এই সাপের বিষে থাকে হেমাটোটক্সিক। এটি রক্তে মিশে শরীরের নানা জটিলতা তৈরি করতে পারে। ফুসফুস ও কিডনী জটিলতা সৃষ্টির মাধ্যমে নষ্ঠ করার মত ক্ষমতা থাকে এবং দংশনের জায়গায় খুব তাড়াতাড়ি ৫ মিনিটের মধ্যে ফুলে যায় ।
এই সাপের বিষে মানুষ বাঁচতে পরে খুব কম । তাই এটিকে কিলিং মেশিন বা মানুষের মৃত্যুদূত বলে থাকে। এদের নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে কেউ গেলে বা যদি তাদের শত্রু মনে করে তাহলে তাদেরকে কামড়ে দেই এই রাসেলস ভাইপার ।
রাসেলস ভাইপার সাপ বা চন্দ্রবোড়া সাপ ভয়ংকর ও মৃত্যুদূত হওয়ার কারণ আরো আছে। এই সাপ কামড়ালে এন্টি ভেনাম ও সহজে কাজ করে না অনেক ক্ষেত্রে । রাসেলস ভাইপার সাপ কামড়ালে ২৫ দিন পরেও মৃত্যু হতে পারে ।
এই সাপ কামড়ালে ৯০ থেকে ১০০ মিনিটের মধ্যে যদি এন্টি ভেনাম দেওয়া না যায় তাহলে সাপে কামড়ানো ব্যক্তির মৃত্যু নিশ্চিত। তাই এই রাসেলস ভাইপার সাপ বা চন্দ্রবোড়া সাপ ভয়ংকর ও মৃত্যুদূত বলে ধারণা করা হচ্ছে ।
রাসেলস ভাইপার সাপ এর উপস্থিতি কোথায় পাওয়া যায়
রাসেলস ভাইপার সাপের এর বিচরণ ভূমি হচ্ছে পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলংকা, ভুটান, নেপাল, চীন, থাইল্যান্ড, মিয়ানমারে এবং কম্বোডিয়া রাজ্যে। তবে বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় জেলাগুলিতে দেখা যাচ্ছে ।
এই রাসেলস ভাইপার সাপ বা চন্দ্রবোড়া সাপের উপস্থিতি আগের বছরগুলিতে শোনা না গেলেও সম্প্রতি বছরগুলিতে খুব বেশি উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে । বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা এবং যমুনা নদীর অববাহিকায় এদের উপস্থিতি বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে ।
১৯৮২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রখ্যাত প্রাণিবিদ আলী রেজা খান এই চন্দ্রবোড়া সাপ এর সনাক্ত করেছিলেন । বাংলাদেশের বরণ্য এলাকা পটুয়াখালী, খুলনা এবং চট্টগ্রাম এ এদের পাওয়া যায় ।
একসময় এই সাপের আর তেমন দেখা না মিললে রাসেলস ভাইপার সাপ বা চন্দ্রবোড়া সাপকে বিলুপ্ত বলে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু বর্তমানে যে হারে এই সাপের উপদ্রুপ বেড়েছে সেটি খুবই ভীতিকর বলে মনে করছেন প্রাণিবিদরা ।
আরও পড়তে পারেনঃ ব্রেইন স্ট্রোক হলে করনীয়
রাসেলস ভাইপার সাপ বা চন্দ্রবোড়া সাপের বিস্তৃতি বাংলাদেশের কোন কোন জেলাগুলিতে
প্রায় সমগ্র বাংলাদেশে এই সাপের বিস্তৃতি দেখা যাচ্ছে। ঢাকার আশ পাশ থেকে শুরু করে প্রায় জায়গায় এখন এই রাসেলস ভাইপার ছড়িয়ে গেছে । ঘরের পাশে ঝোপ-ঝাড়ে থাকতে বেশি ভালোবাসে বলে এর ঘরের আসে পাশে দেখা যায়।
দিনাজপুর, রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, নীলফামারী, রংপুর, বগুড়া, জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, খুলনা, বাগেরহাট, মুন্সিগঞ্জ, লক্ষীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ভোলা, পটুয়াখালী,শরীয়তপুর, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, সাতক্ষীরা ও চট্টগ্রাম। এই জেলাগুলিতে শুধুমাত্র কৃষকের মৃত্যুর খবর শোনা যাচ্ছে ।
এদের বিস্তৃতি দ্রুত এবং বেশি হওয়ার কারণ হচ্ছে, অন্যান্য সাপ ডিম দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। কিন্তু এই রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপেরা ডিম দেয় না এরা সরাসরি বাচ্চা দিয়ে থাকে ।
ডিম দিয়ে বাচ্চা জন্ম দিলে বাচ্চা জন্ম নেওয়ার সংখ্যা কম থাকে। কিন্তু সরাসরি বাচ্চা দেওয়ার কারণে এদের রেকর্ড পরিমান বৃদ্ধি হচ্ছে । একটি রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের কম পক্ষে ৪০ থেকে ৯০ টি পর্যন্ত রেকর্ড পরিমান বাচ্চা জন্ম দিয়ে থাকে ।
রাসেলস ভাইপার সাপ বা চন্দ্রবোড়া সাপ কৃষকের ধানের জমিতে কেন
তাই এই রাসেলস ভাইপার সাপের দেখা কৃষকের চাষযোগ্য জমিতে বেশি দেখা যাচ্ছে । কৃষকেরা ধান কাটতে গিয়ে এদের ছোবলে মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে বেশি ।
অনেকে আবার অজগর সাপ মনে করে থাকেন । এদের দেখতে অজগর সাপের মত মনে হলেও এরা মোটেও অজগর নই । বিষধর এবং স্বয়ং মৃত্যুদূত ।
রাসেলস ভাইপার চন্দ্রবোড়া সাপ থেকে বাঁচতে কি করা উচিত
- জমিতে ধান বা ঘাস কাটার সময় গাম বুট পড়া প্রয়োজন ।
- হাতে গ্লাভস খুবই জরুরি হতে পারে যেহেতু সাপে হাতে বা পায়ে ছোবল দেয় ।
- রাতের বেলা ক্ষেতে বা জমিতে গেলে ও একই অবস্থা হাতে গ্লাভস এবং গামবুট নিয়ে চলা ফেরা করা ভাল ।
- অবশ্যই রাতের বেলা আলো জ্বালিয়ে চলা ফেরা করা দরকার ।
- জমি বা ঝোপঝাড় দিয়ে হাঁটার সময় সাবধানে এবং শব্দ করে চলা ফেরা করা যেতে পারে ।
- ধান বা ফসল কাটার যন্ত্র ব্যবহার সবচেয়ে ভাল হয় ।
- এরা হিস্ হিস্ শব্দ করে কারো আওয়াজ পেলে তাই রাসেলস ভাইপারের হিস্ হিস্ শব্দ শুনলেই অবশ্যই খেয়াল করা দরকার ।
রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ কামড়ালে করনীয়
তাই শুধু এন্টি ভেনাম দিলে হল না। এমনকি অনেক দিন সময় লাগে এন্টি ভেনাম দেওয়ার পর ও সুস্থ করে তুলার জন্যে একজন রাসেলস ভাইপার সাপের কামড়ানোর রুগীকে ।
কামড়ালে করণীয়
- সাপে কামড়ালে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না কারন সাপে কাটলে মৃত্যু হবে এমন কোন কথা নেই ।
- সাপে দংশন করা ব্যক্তিকে সাহস যোগাতে হবে ।
- যতদ্রুত ১০০ মিনিটের মধ্যে এন্টি ভেনাম দেওয়া জরুরি ।
- যে অংশে সাপে দংশন করেছেন সে অংশে চাপ প্রয়োগ করা যাবেনা ।
- আক্রান্ত স্থান দড়ি দিয়ে বন্ধন বা কাটাকুটি করা যাবে না তাহলে মৃত্যু নিশ্চিত এবং রোগী নরক যন্ত্রনা ভোগ করবে ।
- যে অংশে সাপ কামড় দিয়েছেন সে অংশ নড়াচড়া করা যাবে না ।
- পায়ে কামড়ালে হাঁটানো যাবে না ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url