ব্রেইন স্ট্রোক হলে করনীয় এবং ব্রেইন স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় কি ?
সূচীপত্রঃব্রেইন স্ট্রোক হলে করনীয় । ব্রেইন হলো মানব শরীরের প্রধান অংশ মানব শরীর পরিচালনার । কিন্তু এই ব্রেইন নিয়ে আমরা অনেক অসচেতন । আজকে আমরা এই ব্রেইন স্ট্রোক নিয়ে আলোচনা করার জন্যে এসেছি ।
ব্রেইন স্ট্রোক হলে করনীয়, ব্রেইন স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায়, ব্রেইন স্ট্রোকের চিকিৎসা, ব্রেইন স্ট্রোকের হোমিও চিকিৎসা, ব্রেইন স্ট্রোকের লক্ষণ সমূহ এবং ব্রেইন স্ট্রোক হলে কি হয় এই ব্রেইন সম্পর্কিত তথ্য নিয়ে থাকছে আজকের আর্টিকেল। আশা করি একটি ভাল সচেতন মূলক তথ্য আপনারা জানতে পারবেন। তাই সাথেই থাকুন দয়া করে মিস করবেন না ।
ব্রেইন স্ট্রোক বিষয়টা আসলে কি ?
আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনে হঠাৎ করে যদি মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহ কোন কারণে বন্ধ হয়ে যায় বা মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ হয় এতে করে আমাদের ব্রেইন স্ট্রোক হয় ।
ব্রেইন স্ট্রোক কি কারণে হয়
মানুষের দেহের প্রায় সব কিছু নিয়ন্ত্রন করে এই ব্রেইন । সেহেতু এই ব্রেইনের বা মস্তিষ্কের কাজ ও বেশি। তাই যার কাজ বেশি তার বিশ্রামের ও প্রয়োজন পড়ে বেশি ।
তাহলে স্বাভাবিকভাবে বুঝা যায় যে আমাদের মস্তিষ্কের যথাযথ বিশ্রামের অভাবে মানুষের ব্রেইন স্ট্রোক হয়। এছাড়া ও আরো অনেক কিছু রয়েছে এই ব্রেইন স্ট্রোকের পিছনে । যেমন
- নিয়মিত বিশ্রাম না হলে বা নিয়মিত ঘুম না গেলে ।
- আহারের মধ্যে যদি সংযমতা না থাকলে ব্রেইন স্ট্রোক হওয়ার সম্ভবনা থাকে ।
- শরীরের মধ্যে কোন উপসর্গ দেখা দিলে যথাযথ যত্ন না নিলে ।
- বেশি দুশ্চিন্তা করলে, নিয়মিত মস্তিস্ককে বিশ্রাম না দিলে ।
- বেশি পরিমানে নুন বা লবন যুক্ত আহার করার কারণে ।
- জীবনের প্রতি স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি না থাকার কারণে ।
- তামাক বা এলকোহল পান করার কারণে ।
- অতিরিক্ত রাত জাগার কারণে ।
ব্রেইন স্ট্রোক হলে কি হয়
যার দরুন ব্রেইন স্ট্রোক হলে মানুষের শরীরের কিছু অংশ ধরে যায় বা অবস বা অসাড় হয়ে যায় । সে ক্ষেত্রে অনেকের বাম পাশ ধরে যায়। অনেকের ডান পাশ ধরে যায় বা কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে ।
আবার অনেকের স্বাভাবিক কথা বলার ভাষা ও হারিয়ে ফেলে। যখন সে স্বাভাবিকভাবে বলতে চাইলে ও বলতে পারেনা। অনেকের মধ্যে স্মৃতিও নষ্ঠ হওয়ার প্রবণতা দেখা দেই ।
এই ব্রেইন স্ট্রোক হলে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এখন সেটা মানুষের মস্তিষ্কের কোন অংশ রক্ত ক্ষরণ সমস্যা হয়েছে সেটা একমাত্র বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ই ভাল বলতে পারবেন ।
ব্রেইন স্ট্রোকের লক্ষণ সমূহ
ব্রেইন স্ট্রোক হলে কিছু লক্ষণ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন। সেই মতামতের উপর ভিত্তি করে আমরা ব্রেইন স্ট্রোকের লক্ষণ সমূহ তুলে ধরার চেষ্টা করছি ।
চোখে দেখতে সমস্যা হতে পারে। এক চোখে বা উভয় চোখে ।
কোন কারণ ব্যতিত তীব্র মাথাব্যথা শুরু হতে পারে ।
হাঁটার সময় মাথা ঘুরে সমন্বয় হারিয়ে পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা ।
কথা বলতে সমস্যা হতে পারে বা কথা বুঝতে ও সমস্যা হতে পারে ।
শরীরের একপাশে দুর্বল অনুভব করা ।
ব্রেইন স্ট্রোক হলে করনীয়
স্ট্রোক হয়েছে এমন দেখলে বা সম্ভবনা দেখলে দ্রুত ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন । অনেকাংশে রুগীর ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা কম থাকে যদি তারাতারি ডাক্তার দেখানো যায় । আর যদি মস্তিষ্কে রক্ত ক্ষরণ হয় তাহলে অনেক সময় সার্জারীর প্রয়োজন হয়ে পড়ে ।
ব্রেইন স্ট্রোক হলে একমাত্র করণীয় বিষয় হল ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া অথবা ইমার্জেন্সি ইউনিটে ভর্তি করা ।
ব্রেইন স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায়
- ব্রেইন স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে সুগার ও প্রেশার নিয়ন্ত্রণ রাখা অত্যন্ত জরুরী ।
- নিয়মিত ৩০ মিনিট সকাল বেলা হাঁটা ।
- সদ্য খাওয়ার খেতে হবে বাসি খাওয়ার থেকে দূরে থাকুন ।
- মদ্যপান এবং সিগেরেট খাওয়া থেকে বিরত থাকুন ।
- নিয়িমিত ম্যাডিটেশন করুন অন্তুত ১০ থেকে ২০ মিনিট ।
- মনকে রিলেক্স রাখুন অর্থাৎ দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকুন ।
- মাইনর এটাক হলে বিশেষজ্ঞর সাথে জরুরি পরামর্শ করুন ।
আরও পড়তে পারেনঃ মেলাটনিন হরমোনের কাজ কি ?
ব্রেইন স্ট্রোকের চিকিৎসা
ইস্কেমিক ব্রেইন স্ট্রোক কি ?
ইস্কেমিক ব্রেইন স্ট্রোকের চিকিৎসা পদ্বতি
কারন ব্রেইন স্ট্রোকের ধরন পরিক্ষা করে তারপর উপরোক্ত পদ্বতি গুলির মাধ্যমে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন একজন ইস্কেমিক ব্রেইন স্ট্রোকের রোগিকে ।
হেমোরেজিক স্ট্রোক কি ?
হেমোরেজিক স্ট্রোক চিকিৎসা পদ্বতি
এই হেমোরেজিক ব্রেইন স্ট্রোকের চিকিৎসা পদ্বতিগুলি বিশেষ করে এই ক্ষেত্রে জরুরি ভাবে ব্যবস্থা নিতে হয় । তারপর অবস্থা ভেদে সার্জারির দরকার পড়ে ।
কোন ধরনের ব্রেইন স্ট্রোকে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি
সাধারণত ইস্কেমিক ব্রেইন স্ট্রোকের মধ্যে মৃত্যুর সম্ভবনা কম থাকে এবং রিকোবার করে। সঠিক সময়ে পদক্ষেপ নিলেই এই স্ট্রোক থেকে বাঁচা যায়। তবে এখানে ইস্কেমিক ব্রেইন স্ট্রোক হয় বিশেষ করে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পেলে ।
মস্তিষ্কে রক্তনালী সরু হয়ে গেলে রক্ত বাধা প্রাপ্ত হলে অক্সিজেন ব্যাহত হয় যার ফলে স্ট্রোক হয়ে যায়। এই পর্যায়কে বলে হচ্ছে ইস্কেমিক স্ট্রোক ।
তবে হেমোরেজিক ব্রেইন স্ট্রোক হলে একটু বিপদ থাকে। কারণ এই স্ট্রোক মানুষের মস্তিষ্কের পূর্বের রক্তনালী সরু হয়ে যখন রক্ত পরিবাহিত হতে পারে না। তখন রক্তের চাপে সরু রক্তনালী ছিদ্র হয়ে যায় বা ছিঁড়ে গিয়ে রক্ত বাইরে চলে যায়।
এতে করে মানব শরীরের যে কোষগুলি শরীরের অংশ পরিচালনা করে সেই কোষগুলির কার্জক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। তখন মানুষ স্ট্রোক করে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশ অবস বা নিরস হয়ে পড়ে অথবা কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
এই ক্ষেত্রে ডাক্তার বা বিশেষজ্ঞ দের শরণাপর্ণ হওয়া জরুরি। কারণ এই ক্ষেত্রে অনেকের সার্জারী ও করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তাছাড়াও এই হেমোরেজিক ব্রেইন স্ট্রোকে অনেকের প্রাণ হানির সম্ভবনা রয়েছে ।
ব্রেইন স্ট্রোক হলে করনীয় এ নিয়ে শেষ বার্তা
আমাদের দেশে মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে এই ব্রেইন স্ট্রোক । তাই সচেতন হোন । নিজেকে স্থির রাখুন । দুশ্চিন্তার প্রবণতা আমাদের মত বাঙালিদের মধ্যে দেখা যায় বেশি । ব্রেইন স্ট্রোক হলে করনীয় কি এই নিয়ে আমরা অনেকক্ষন ধরে কথা বলেছি ।
ব্রেইন স্ট্রোক হলে করণীয় বলে কথা নই লক্ষণ কি , চিকিৎসা সম্পর্কে ও বলেছি। আশা করি চিন্তার কারণ নেই । নিজেকে সুস্থ রাখুন। নিয়মিত ব্যায়াম করুন । নিয়মিত অ্যালকোহল সেবন থেকে বিরত থাকুন ।
মনের যতসব জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
ব্রেইন স্ট্রোক আমাদের দেশে বেশি হওয়ার কারন কি ?
আমাদের দেশে ব্রেইন স্ট্রোক হওয়ার কারণ হচ্ছে অনিয়মিত আহার, অনিয়মিত ঘুম, প্রেশার নিয়ন্ত্রণ না রাখা, বেহিসেবি জীবন যাপন এবং চর্বি যুক্ত ভেজাল খাওয়ারের ফলে আমাদের দেশে ব্রেইন স্ট্রোকের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে ।
ব্রেইন স্ট্রোক নারীদের বেশি হয় নাকি পুরুষের ?
ব্রেইন স্ট্রোক হয় আসলে যারা মানসিক চাপে থাকে এবং অনিয়মিত চলাফেরা করে তাছাড়াও আরেকটি কথা আছে সেটি হচ্ছে যাদের মস্তিষ্কের যথাযত বিশ্রাম দেয় না তারা বিশেষ করে এই ব্রেইন স্ট্রোক করে। এই ক্ষেত্রে নারদের চেয়ে পুরুষের মধ্যে স্ট্রোক হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। কারণ হিসেবে বলা যায় সব সময় পুরুষেরা একটি সংসারিক চাপের মধ্যে থাকে ।
কাদের মধ্যে ব্রেইন স্ট্রোক হওয়ার সম্ভবনা নেই ?
ব্রেইন স্ট্রোক হওয়ার সম্ভবনা একদম যে নেই সেই কথা বলা যায় না। হ্যা তবে যারা নিজেকে (মাইন্ড) সর্বদা রিলেক্সে রাখে বা যাদের মস্তিষ্ক বিশ্রাম পাই তাদের ব্রেইন স্ট্রোক হওয়ার প্রবণতা তেমন নেই। আবার আরেকটি কথা না বললেই নই, যাদের মধ্যে মেডিটেশনের অভ্যাস রয়েছে অর্থাৎ মন স্থিরতার অভ্যাস করে দীর্যদিন তাদের মধ্যে ব্রেইন স্ট্রোক করার সম্ভবনা ৯০% নেই বললেই চলে ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url