কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক কে বলে তা বহুদূর সারমর্ম
সূচীপত্রঃআজকে এই আর্টিকেলে সারমর্ম কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক কে বলে তা বহুদূর এর পুরো কবিতা, এর ভাবসম্প্রসারণ সব কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করবো। এই কবিতার মাধ্যমে যে আমাদের জীবনে কি বার্তা দিয়েছেন তা আমরা সমুদয় কবিতার পংক্তিগুলি তুলে ধরেই আলোচনা করার চেষ্টা করবো ।
কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক কে বলে তা বহুদূর
মানুষের মাঝে স্বর্গ নরক মানুষেতে সুরাসুর ।
রিপুর তাড়নায় যবে মোদের বিবেক পাইগো লয়
আত্মগ্লানির নরক যন্ত্রনায় তখনি ভুগিতে হয় ।
প্রীতি আর পুণ্যের বাঁধনে যবে মিলি পরষ্পরে
স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় আমাদেরি কুঁড়েঘরে ।
কবি ও লেখক শেখ ফজলুল করিম এর এই অনবদ্য রচনা মানুষের মনে সাড়া জাগিয়েছে বহুকাল ধরে। তিনি সাধকের মত অতি সুন্দর করে তুলে ধরেছেন যে মানুষের সুখ দুঃখকে।
এই কবিতার প্রথম দুই লাইন হলো মূল কেন্দ্র স্থল। এখানে স্বর্গ এবং নরকের কথা বলা হয়েছে এবং পরের লাইনগুলিতে স্বর্গ এবং নরক এর বর্ণনা দিয়েছে কবি অত্যন্ত সুন্দর ভাবে ।
আমরা এই কবিতা সম্পর্কে আরো ভাল করে বলার চেষ্টা করছি। সাথেই থাকুন আশা করি আপনি নিজেকে খুঁজে পাবেন এবং নিজের সুখ দুঃখের ভাব অনুধাবন করতে পারবেন ।
আরও পড়তে পারেনঃ জন্মান্তরবাদ কাকে বলে ? জন্মান্তরবাদ কি সত্য ?
কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক কে বলে তা বহুদূর মানুষের মাঝে স্বর্গ নরক মানুষেতে সুরাসুর
স্বর্গ আর নরক হলো অলীক । যা দেখা যায় না কেবল মাত্র অনুধাবন করা যায় । এখানে কবি সুখ দুঃখকে স্বর্গ এবং নরকের সাথে তুলনা করেছেন। যেহেতু আমরা সবাই স্বর্গ সুখের স্থান এবং নরক দুঃখের স্থান হিসেবে জানি ।
সেহেতু কবি এখানে সুখকে ও বৰ্ণা করেছেন আবার নরককে বর্ণনা দিয়েছেন। কিভাবে আপনি চাক্ষুষ এবং নিজে সেই সব স্বর্গের ও নরকের সুখ ও দুঃখ ভোগ করছেন তা আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন ।
তিনি প্রথম দুই লাইনে বলেছেন স্বর্গ নরক দূরে নয়। আমাদের অনেক সন্নিকটে কিন্তু তা দেখা যায় না কেবল নিজে অনুভব করবেন। কারণ এই স্বর্গ নরক আপনার ভিতরে বিরাজ করছে ।
যেহেতু আমরা কল্পনার রাজ্যে স্বর্গকে এবং নরককে অঙ্কন করেছি। সেহেতু আমরাও সুখ দুঃখকে কল্পনার মাধ্যমে গ্রহণ করি এবং ভোগ করি। এখানে কবি সেই কথায় বলেছেন ।
কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক কে বলে তা বহুদূর
মানুষের মাঝে স্বর্গ নরক মানুষেতে সুরাসুর ।
রিপুর তাড়নায় যবে মোদের বিবেক পাইগো লয়, আত্মগ্লানির নরক যন্ত্রনায় তখনি ভুগিতে হয়
পৃথিবীতে সুখ দুঃখের স্বাদ পাই নি এমন মানুষ পাওয়া বড়ই মুশকিল। মানুষ কেন সমস্ত প্রাণিকুল এই সুখ দুঃখের মধ্যে দিয়ে যায়। এখানে রিপুর তাড়নায় মানুষের যন্ত্রনা ভোগ করতে হয় ।
আমরা রিপুর ও আত্মগ্লানির এই দুইটির মধ্যে বোল্ট করে দিয়েছি। কারণ নরকের যাতনার সাথে মানে দুঃখের সাথে এই রিপুর নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। চলুন তাহলে জেনে আসি রিপু কি।
রিপু হচ্ছে চিন্তা শক্তির মধ্যে গুপ্তভাবে বিরাজমান কিছু চাহিদা ও কামনা। রিপু ছয়টি যথা কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য। এই ছয়টি রিপুর চাহিদা ছয় প্রকার তবে সব কটির উৎপত্তি বিশেষ করে কাম থেকে ।
রিপু
- কাম মানে হলো বিভিন্ন কামনা-বাসনা, ইচ্ছা-অনিচ্ছা, সেক্স কিংবা নারী পুরুষের জৈবিক চাহিদা।
- ক্রোধ মানে হলো রাগ, দ্বেষ ।
- লোভ মানে হলো আকাঙ্খা বা নিজের অধিকারের বাইরে কিছু অনুমতি বিহীন প্রাপ্তিতা ।
- মোহ শব্দের মানে হলো মায়া। যে মায়ার প্রভাবে জগতে পিতা, মাতা, সন্তান, আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুবান্দবের প্রতি অদৃশ্য একটি সুতার মাধ্যমে একজন আরেকজনের সাথে সম্পর্ক ।
- মদ হলো আমিত্ব ভাব। যাকে অহমিকা ভাব ও বলে থাকে ।
- মাৎসর্য্য শব্দের অর্থ হলো পরশ্রীকাতরতা। অন্যের সুন্দর্য্য দেখে কাতর হওয়া ।
এই রিপুর তাড়নায় মানুষ অনেক অন্যায় এর সামিল হয়। নিজের চাহিদা পূরণ করার জন্যে এই রিপুর চাহিদা গুলি মানুষকে অন্যায় কাজে জড়িত করে মানুষের চিন্তার মাধ্যমে। যার ফলস্বরূপ আমরা আত্মগ্লানির অর্থাৎ মনের যন্ত্রনায় ভুগে থাকি ।
আরও পড়তে পারেনঃ সকাম ও নিষ্কাম কর্ম কাকে বলে ?
যে মনের যন্ত্রনা মানুষের মধ্যে উৎপত্তি হলে মানুষ আত্মহত্যা করার পথে নিয়োজিত হয়। যে মনের যন্ত্রনা একবার উৎপত্তি হলে মানুষ কাউকে দেখতে পারে না। শুধু দুঃখ অনুভব করেন। কারণ মনের দুঃখ কাউকে দেখানো যায় না।
তাই কবি বলেছেন আত্মগ্লানির নরক যন্ত্রনায় তখনি ভুগিতে হয়। মনেই নরক রচনা করেন কর্মের মাধ্যমে আবার কর্মের মাধ্যমে মন স্বর্গও নির্মাণ করেন। এখানে মনস্তাত্ত্বিক এই কবিতা মানুষের মনের দিকটাই তুলে ধরেছেন।
এটাই নরক যন্ত্রনা । কারণ উপরোক্ত ষড়রিপু গুলি মানুষকে প্রতিক্ষণে কুচিন্তায় ডুবিয়ে রাখেন ।
প্রীতি আর পুণ্যের বাঁধনে যবে মিলি পরষ্পরে স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় আমাদেরি কুঁড়েঘরে
এবার আসি স্বর্গের কথা নিয়ে এতক্ষন আমরা নরকের কথা বলেছি। এই সব স্বর্গ নরক হলো মনের চিন্তার মাধ্যমে কর্মের ফল। স্বর্গ ঠিক একই। প্রীতি মানে হলো ভালোবাসা এবং পুণ্যের বাঁধন মানে নম্রতা এবং নির অহংকারিতার বন্ধন।
ভালোবাসা এবং নিরহংকারিতা দিয়ে যে স্বর্গ আপনি রচনা করবেন সেটা স্বর্গের তুলনা হয় । তার মানে আপনি এই ভালোবাসা এবং নিরহংকারিতা দিয়ে সুখ অনুভব করবেন তাই হলো স্বর্গের সুখ ।
এখানে কুঁড়ে ঘরের কথা কবি তুলে এনেছেন এই কারণে যে মানুষের মনে একটি ধারণা গুপনে রয়ে গেছে সেটি হলো সুখ শুধু দালান কোঠার মধ্যে নিহিত রয়েছে। কুড়ে ঘরে শুধু মানুষ দুঃখে থাকেন ।
আসলে সুখ দুঃখ তো মনেই উপভোগ করে। তাই যেখানে ভালোবাসা থাকে সেটা হোক কুঁড়ে ঘর সেখানে সুখ বিরাজমান সর্বদা। যেমন একটি উদারন দেওয়া যাক ।
যেখানে বসে পিতা-মাতা, ভাই-বোন আত্মীয় স্বজন একসাথে বসে খাবার খাচ্ছেন। কষ্ট করে সারা দিন উপার্জন করে একজন পিতা সবাইকে নিয়ে একসাথে বসে রাতের খাওয়ার সারছেন এবং একজন আরেকজনের সাথে ভাব বিনিময় করছেন ।
সেই সুখ আপনি অনেক বড় দালান কোঠায় যারা রয়েছে এমন মানুষের মধ্যে ও দেখতে পাবেন না। তাই কুঁড়ে ঘরের কথা তুলে ধরেছেন। সুখ কুঁড়ে ঘরেও থাকে। যদি প্রীতি আর পুণ্যের বাঁধন থাকে ।
ভালোবাসা এবং নিরহংকারিতা মাধ্যমে পরস্পরের সাথে মিলিত হতে পারি একজন আরেকজনের দুঃখকে সুখকে নিজের মত করে ভাগাভাগি করে নিতে পারি সেটাই সুখ বলছেন কবি ।
সারমর্ম কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক কে বলে তা বহুদূর
এখানে আপনার চিন্তা শক্তির উপর নির্ভর করে আপনার সুখ দুঃখ আপনি নিজেই রচনা করেছেন। সারমর্ম হলো এই যে আপনার মনের বিভিন্ন কামনা-বাসনা, লোভ-লালসা এবং রাগ বা ক্রোধের মাধ্যমে যা কিছু রচনা করবেন তাই আপনি ভোগ করবেন ।
তাকে নরক বলে থাকে। সেটা আপনি নিজে নিজে মনের মধ্যে অনুভব করবেন এবং আত্মগ্লানিতে ভোগবেন। আর ভালোবাসা ও নিরহংকারিতা নিয়ে যা প্রেম প্রীতি অন্যের মাঝে বিলিয়ে দিয়ে অন্যের সাথে একে ওপরের সাথে মিলিত হবেন সেটাই সুখ ।
কারণ সেখানে কোন স্বার্থ নেই আছে শুধু অন্যের উপকার অন্যের সুখ কে নিজের করে পাওয়া। যেমন কাউকে দেন করে। যাদের খাওয়ার অর্থ নেই তাদের কে খাবার খাওয়ানোর মধ্যে ।
যার কাছে কন্যা বিয়ে দেওয়ার টাকা নেই তাকে অর্থ সাহায্যের মাধ্যমে কন্যা বিয়ে দেওয়া এইগুলি হলো একেকটা সুখের ঠিকানা। এখানে শুধু ভালোবাসা আছে প্রেম আছে নিরহংকারিতার দ্বারা অন্যের উপকারের চিন্তা আছে ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url