চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে গানের অর্থ কি

চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে গানের অর্থ কি

চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে   
আমরা ভেবে করবো কি 
ঝিয়ের পেটে মায়ের জন্ম  
তাকে তোমরা বলবে কি । 
ছয় মাসের এক কন্যা ছিল 
নয় মাসে তার গর্ভ হল
এগারো মাসে তিনটি সন্তান 
কোনটা করবে ফকিরি । 
ঘর আছে তার দুয়ার নাই 
প্রাণ আছে তার বাক্য নাই
কে তাহারে আহার জোগায় 
কে দেয় সন্ধ্যাবাতি । 
লালন ফকির ভেবে বলে 
ছেলে মরে মাকে ছুঁলে গো 
এই তিন কথার অর্থ নইলে 
তার হবে না ফকিরি । 

সূচীপত্রঃচাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে গানের অর্থ কি । বাউল গানের ভক্ত দিন দিন বাংলাদেশে বৃদ্ধি পাচ্ছে । শুধু বাংলাদেশ নই ভারত সহ সারা বিশ্বে এই বাউল গানের প্রচার বেড়ে গিয়েছে। কারণ হলো বাউল গানের সহজ ভাষা কিন্তু কঠিন এবং গভীর তত্ত্বের জন্যে । তার সাথে ভাবের মাধ্যমে মানুষের অন্তরে এক অফুরন্ত শান্তির উদয় করতে পারে এই বাউল গান। 
তাই আজকে আমরাও বাউল গানের এক গভীর তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করছি সেটা হচ্ছে চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে এই গানের অর্থ কি তা নিয়ে । আসা করি আজকে এই গানের মাধ্যমে একজন মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু এবং আত্মার শান্তি সম্পর্কে ও আপনি গভীরভাবে জানতে পারবেন ।

চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে গানের অর্থ কি

বাউল গানের সার্থকতা হলো তার গানের গভীর ভাব এবং তত্ত্বের মধ্যে । মহাত্মা লালন সাঁইজির এই গান অনেকের মনে প্রশ্নের রেখাপাত ঘটিয়েছেন অনেক বছর ধরে । যদিও অনেকের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে এই গানের রচয়িতা মহাত্মা লালন সাঁইজি কিনা । 

তবে আশা করি আপনারা গানের কথা এবং ব্যাখ্যা গুলি পড়লে বুজতে পারবেন অনায়াসে । অনেকে জানতে চেয়েছে চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে গানের অর্থ কি বা চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে গানের লিরিক্স অথবা ছয় মাসের এক কন্যা ছিল নয় মাসে তার গর্ভ হল এবং ঝিয়ের পেটে মায়ের জন্ম এই সমস্ত কথার অর্থ কি ?

কারণ এই গানটির মধ্যে সাধারণ কথার ভিতরে অসাধারণ তত্ত্ব লুকিয়ে রয়েছে । এই গানের প্রতিটা শব্দের এক অনন্য ভাব রয়েছে তত্ত্ব রয়েছে যা জ্ঞান পিপাসু মানুষের মধ্যে বার বার পিপাসা জাগিয়েছেন । তাই আজকে আমরা এই গান সম্পর্কে একেক লাইনের তত্ত্ব তুলে ধরার চেষ্টা করবো ।

চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে  আমরা ভেবে করবো কি

এখানে চাঁদ বলতে বলা হয়েছে অন্ধকারের মধ্যে যা উজ্জ্বল তা চাঁদের মত জ্বলছে । মানুষের মধ্যে এক অনন্য শক্তি যা আমরা পরম পিতা থেকে পেয়ে এসেছি যা খোদা, ঈশ্বর কিংবা সৃষ্টিকর্তা থেকে পেয়েছি ।

তা হলো নারীর মধ্যে মাতৃ শক্তি রূপে ডিম্বানু রুপে আর পুরুষের মধ্যে পিতৃ শক্তি শুক্রানু রূপে বিরাজমান । উভয়ে তিনি মানে ইশ্বরেরি অংশ । তিনি নারী পুরুষের মধ্যে এই অসীম শক্তি রুপে রয়েছেন । 

আর তা হলো বীর্য শক্তি যা দিয়ে জগৎ সৃষ্টি । এবং যার মিলনে প্রাণের সৃষ্টি বা জন্ম হচ্ছে । এখন নারী আর পুরুষের মিলনে যে প্রাণ সৃষ্টি হচ্ছে তাকে বলছেন চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে আমরা ভেবে করবো কি । অর্থাৎ তিনি নিজেই নারী পুরুষের মধ্যে থেকে মিলিত হয়ে এক প্রাণের সৃষ্টি করছেন । 

ঝিয়ের পেটে মায়ের জন্ম  তাকে তোমরা বলবে কি 

যদি আদি শক্তি বীর্য হয়ে থাকে, তাহলে নারী পুরুষের মিলনে যে সন্তানের জন্ম হলো বা মেয়ের জন্ম হলো তার ভিতরে ওই একই ডিম্বানুর বা মাতৃশক্তির জন্ম হয়েছে । 

তাকেই বলে সন্তান জন্মের পর আবার সেই সন্তানের ভিতর নারী শক্তি রূপে ডিম্বানুর সৃষ্টি হলো মানে ঝিয়ের পেটে আদি শক্তি মায়ের মানে নারী শক্তির ডিম্বানু মা রূপে  জন্ম হলো । 

এখানে সেই আদি শক্তি বা নারী শক্তিকে মায়ের জন্ম বলছেন । ঝিয়ের পেটে মায়ের জন্ম তাকে তুমরা বলবে কি । এই কথাটি গানের ভাষায় সাধারণ ভাবে বলেছেন যদিও এই গানের পংক্তি বড়োই তাৎপর্য পূর্ণ । 

ছয় মাসের এক কন্যা ছিল নয় মাসে তার গর্ভ হল

গানের এই কথার উপর ভিত্তি করে যে ছয় মাসের এক কন্যা ছিল মানে রূপক অর্থে ছয় মাসের এক কন্যা বলতে মানুষের মধ্যে ষড়রিপুর কথা বলছেন । 

এখানে রিপু হলো যথা ১. কাম (ভিবিন্ন কামনা-বাসনা, আকাঙ্খা ), ২. ক্রোধ (রাগ), ৩. লোভ (লালসা), ৪. মোহ (মায়া), ৫. মদ (আমিত্ব, অহমিকা), ৬. মাৎসর্য (পরশ্রীকাতরতা) । 

চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে গানের অর্থ কি

নয় মাসে তার গর্ভ হলো গো মানে হলো নয়টি দ্বারের কথা বলেছেন। যথা দুই নাসিকা , দুই কান , দুই চোখ, একটি মুখ, একটি মলদ্বার, আরেকটি হলো লিঙ্গদ্বার ।  

এই নয় দ্বার কে নয় মাসে তার গর্ভ হলো মানে এই নয়টি দ্বারের সৃষ্টি হলো। রূপক অর্থে এই নয় মাসের গর্ভ হলো মানে হলো এই নয়টি দ্বারের সৃষ্টি হলো ।

এগারো মাসে তিনটি সন্তান কোনটা করবে ফকিরি

গানের তাৎপর্য এমনি গভীর যে আপনি ভাবনা করতেই খুবই কষ্ট হবে।  কারণ বাউল এটি সন্যাসীর এক পদবি । যেখানে সাধারণ জীবন যাপনের মধ্যে অসাধারণ প্রেম রয়েছে । 

এগারো মাসে বলতে একাদশ ইন্দ্রিয়ের কথা বলেছেন যথা ৫ টি জ্ঞানেন্দ্রীয় যথা চক্ষু (চোখ), কর্ণ (কান), নাসিকা (নাক), জিহবা (জিব্বা), ত্বক(শরীরের ত্বক) এই পাঁচটি হলো জ্ঞানেন্দ্রিয় যা দিয়ে জ্ঞান অর্জন করে। আর ৫ টি হলো কর্মেন্দ্রিয় যথা বাক (কথা), পাদ (পা), পাণি (হাত), পায়ু (মলদ্বার), উপস্ত (লিঙ্গদ্বার) এই পাঁচটি হলো কর্মেন্দ্রিয় ।
 
যা দিয়ে আমরা কর্ম সম্পাদন করি। এর বাইরে আর হলো মন। যা দিয়ে আমাদের সমস্ত জীবন এবং দেহ পরিচালিত করি। এখানে একাদশ ইন্দ্রিয় কে এগারো মাসে বলা হয়েছে ।

 আর তিনটি সন্তান হলো আমাদের মধ্যে মানে মানব দেহ তিনটি গুন্ নিয়ে পরিচালিত হয় একটি হলো সত্ত্ব গুন্, রজঃ গুন্  এবং তম গুন্ তিনটি গুনের মাধ্যমে জীব পরিচালিত হয় একেই তিনটি সন্তান বলা হয়েছে। এই তত্ত্ব যারা জানে তারাই হলেন বাউল ফকির ।  

ঘর আছে তার দুয়ার নাই প্রাণ আছে তার বাক্য নাই, কে তাহারে আহার জোগায় কে দেয় সন্ধ্যাবাতি

একটি অনাগত শিশু যখন মায়ের পেটে থাকে তখন কিন্তু মায়ের পেটে তার জন্ম হয়েছে এবং প্রাণ আছে কিন্তু মায়ের পেটের ভিতর তিনি সময় বরাবর খাওয়ার খাচ্ছেন ।


কে তাকে এতো যত্ন করে আহার দিচ্ছেন বা খাওয়াচ্ছেন এই জিজ্ঞাসা বাউলের। তাই বলছেন ঘর আছে তার দুয়ার নাই। প্রাণ আছে তার বাক্য নাই। প্রাণ আছে কিন্তু কথা বলতে পারে না । 


আরও পড়তে পারেনঃ সকাম ও নিস্কাম কর্ম কাকে বলে ? 

লালন ফকির ভেবে বলে ছেলে মরে মাকে ছুঁলে গো এই তিন কথার অর্থ নইলে তার হবে না ফকিরি 

লালন ফকিরের ব্যাকুলতার সহিত জানার আগ্রহ জানিয়েছেন ছেলে মরে মাকে ছুঁলে গো। এইটা আবার কি কথা?ছেলে কিভাবে মরবে মাকে ছুঁলে বা স্পর্শ করলে। এখানে বুজতে হবে মা কে? জন্ম কি বা মৃত্যু কি? 

প্রথমে মা কে সেটা একটু বলে আসি। এই জগত যিনি রচনা করেছেন বা যিনি নারী পুরুষের মধ্যে ওজ রূপে বা শুক্রাণু রূপে এবং নারীর মধ্যে ডিম্বাণু রূপে বিরাজ করছেন তিনি হলেন মা। এখানে মা বলেছেন কেন? 


সেটি হলো যেহেতু জন্মের কথা বলছেন সেহেতু মায়ের পেট থেকে আমাদের জন্ম হয় তাই। সেই মা যিনি জগৎ বিধাতা। তাকেই মা বলে সম্বোধন করেছেন বাউল সাধক মহাত্মা ফকির লালন সাইঁজী। 


এবার আসি জন্ম ও মৃত্যু কাকে বলে। আমরা বাউল সাধকের কথা পন্থা অনুযায়ী আমাদের অনেক বার জন্ম হয়েছে। আমরা বার বার মরি আবার বার বার জন্ম লাভ করি । 


কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে আত্মাকে দেখা যায় না বলে বুজতে পারি না আমাদের জন্ম মৃত্যু কি। আমাদের আশা যাওয়া বার বার হচ্ছে। বার বার আসা যাওয়া হলো জন্ম ।


আর মৃত্যু মানে হলো একেবারে চলে যাওয়া। তাহলে এখানে মৃত্যু হলো একেবারে আর কোনোদিন আমাদের জন্ম মৃত্যু হবে না তাকে বলে মৃত্যু। অর্থাৎ আমরা আর এই জন্ম মৃত্যু গ্রহণ করবো না । 


কিভাবে তা সম্ভব? এখানে বাউল সম্রাট মহাত্মা লালন সাঁইজি সেই কথা বলেছেন যে, যে মাকে ছুঁলে মানে স্পর্শ করলে।  কোন মা যিনি জগৎ বিধাতা ওজ রূপে রয়েছেন । 


নারী পুরুষের মধ্যে শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু রূপে রয়েছেন সেই মাকে যদি সম্যক রূপে জানতে পারি বা স্পর্শ করতে পারি তা হলে আমাদের আর জন্ম মৃত্যু থেকে মুক্ত হবো। মানে আর এই জগতে আসতে হবে না । 


এখানে তাকে স্পর্শ করা মানে হলো তাকে বিশেষ ভাবে এবং তার ভাবে মিলিত হওয়াকে বলা হয়েছে । সেই ভাব নিয়ে আমরা অন্য কোন একটি আলোচনা করব । কারন এই ভাব অত্যান্ত গভীর । কিভাবে তাকে জানা যাবে । 


এই গানের ব্যখা করেছেন শ্রীমৎ ধ্যানেশ্বর চৈতন্য । সাধুর পাড়া, সার্বজনীন কালীমন্দির, চান্দগাঁও, চট্টগ্রাম ।  

চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে গানের অর্থ কি শেষ কথা

চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে গানের অর্থ কি এই গানের অনেকে ব্যখ্যা খুঁজে থাকেন অনলাইনে । মহাত্মা লালন সাঁইজীর এই গানের কথা এখনো অনেকে জানেন না । কারন হল এর গভীর তত্ত্ব সবাই বুজতে পারে না । বাউলরা তাদের গানের মধ্যে সাধারন কথার মধ্যে অসাধারন সব ভাব তুলে ধরেন । 

আমাদের এই আর্টিকেল পড়ে আশা করি আর তেমন সন্দেহ বা চিন্তা থাকবে না । আর যদি মনের দন্দ্ব চলে যায় আমাদের এই ব্যখ্যার মাধ্যমে তাহলে শেয়ার করে মানুষের মধ্যে পৌঁছে দিবেন ।  

আপনার জন্যেঃ বুদ্ধ পূর্ণিমা কি কেন পালন করে

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪