মিলন হবে কত দিনে । চাতক প্রায় অহর্নিশি চেয়ে আছে কালো শশী


চাতক প্রায় অহর্নিশি চেয়ে আছে কালো শশী

মিলন হবে কত দিনে আমার
মনের মানুষের সনে । 
চাতক প্রায় অহর্নিশি
চেয়ে আছে কালো শশী 
হবে বলে চরন দাসী
ও তা হয়না কপাল গুনে ।  
মেঘের বিদ্যুৎ মেঘে যেমন
লুকালে না পাই অন্বেষণ
কালারে হারায়ে তেমন
ওই রূপ হেরিনু দর্পণে । 
যখন ওই রূপ স্মরণ হয়
থাকে না লোক লজ্জার ভয় 
লালন ফকির ভেবে বলেন সদাই
ওই প্রেম যে করে সে জানে ।

সূচীপত্রঃচাতক প্রায় অহর্নিশি চেয়ে আছে কালো শশী । লালনের গানের মধ্যে এক অসাধারণ প্রেম এবং গভীর তত্ত্ব খুঁজে পাওয়া যায় । যা অন্য গানের মধ্যে পাওয়া যায় না । মহাত্মা লালন সাঁইজির অনেক গানের মধ্যে এই গানটি, মিলন হবে কত দিনে আমার মনের মানুষের সনে ।

খুবই জনপ্রিয় একটি গান । এই গানটি প্রায় মানুষ চাতক প্রায় অহর্নিশি চেয়ে আছে কালো শশী এই নাম অনলাইনে সার্চ দিয়ে জানতে চান এই গানের মাহাত্ম্য কি ?  আবার অনেকে লিরিক্স খুজেঁন । তবে আমরা আজকে মিলন হবে কত দিনে এর ব্যাখ্যা তুলে ধরার চেষ্টা করবো । 

মিলন হবে কত দিনে আমার মনের মানুষের সনে

প্রত্যেক মানুষের জীবনে মনের মানুষ থাকে আর সেই মনের মানুষকে একেক জন একেক রকম বলে মনে করে। অনেকে মনের মানুষ মনে করে প্রথিবীতে জন্ম নেওয়া প্রিয় মানুষকে ।
 
আসলে বাউল সন্যাসীরা যে মনের মানুষের কথা বলেছেন  সে মনের মানুষ কিন্তু আমাদের পার্থিব জীবনের মানুষদের কথা বলেননি। এখানে মনের মানুষ হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা বা ঈশ্বর। কারণ তিনিই হচ্ছেন এই জগতের মালিক । 

তাই বলেছেন মিলন হবে কত দিনে আমার মনের মানুষের সনে। যতদিন পর্যন্ত সেই ঈশ্বরের সাথে বা সৃষ্টিকর্তার সাথে মিল হবে না ততদিন পর্যন্ত আমাদের জন্ম- মৃত্যু বন্ধ হবে না ।
 
আরেকটি ব্যাখ্যা দেওয়া যায়। বাউল সন্যাসীরা গৃহ ত্যাগী। তাই তাদের এই পৃথিবীর মানুষকে মনের মানুষ বলার কোন অবকাশ নেই ।  

আরও পড়তে পারেনঃ চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে আমরা ভেবে করব কি 

চাতক প্রায় অহর্নিশি চেয়ে আছে কালো শশী হবে বলে চরন দাসী ও তা হয়না কপাল গুনে

মনের মানুষের সাথে মিলনের ধারাকে চাতক পাখি পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন মহাত্মা সাঁইজি। চাতক পাখি হলো এমন এক পাখি যে মেঘের জল ছাড়া আর কোন জল খাই না । তিনি দিবানিশি মেঘের দিকে চেয়ে আছেন । 

মেঘ মানে হলো কালো শশী। কখন মেঘের জল এসে পৃথিবীতে পড়বে তারপর সেই মেঘের জল খেয়ে চাতক পাখি বেঁচে থাকবেন । অন্যতায় এই চাতক পাখি পানির অভাবে মারা যাবেন । 

এখানে একজন সাধক তার মনের মানুষের সাথে মিলিত হওয়ার জন্যে অহর্নিশি চেয়ে আছে। এখানে লালন সাঁইজি এক অনন্য উদাহরণ টেনে আনলেন চাতক পাখি কে নিয়ে । 

কিন্তু দুর্ভাগ্য সেই মেঘের দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে চাতক পাখি মারা যায়। সাধক ও ঠিক তেমন করে মনের মানুষের সাথে মানে ঈশ্বরের সাথে মিলিত হওয়ার জন্যে পথ চেয়ে বসে আছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য মিলন হয় না কপাল গুনে ।
 
এখানে কপাল মানে হলো কর্মফল। আপনার জীবনের কর্মফল অনুযায়ী আপনার জীবন নির্মাণ হয়েছে কিন্তু কপাল গুনে সেই মনের মানুষের সাথে দেখা হলো না। সেই কথায় বাউল সাধক এই গানে বুঝিয়েছেন । 

মেঘের বিদ্যুৎ মেঘে যেমন লুকালে না পাই অন্বেষণ কালারে হারায়ে তেমন ওই রূপ হেরিনু দর্পণে


এই যে মনের মানুষের সাথে মিলন হলো না। কেন হলো না তার উদারন দিয়ে এই কথাটি বুঝিয়েছেন যে মেঘের সাথে মেঘের ঘর্ষণের ফলে যে বিদ্যুতের উৎপন্ন হয় বা বিজলি চমকিয়ে উঠে। যে আলোর ঝলকানি আবার কোথায় মিলিয়ে যায় ।
 
চাতক প্রায় অহর্নিশি চেয়ে আছে কালো শশী

আমাদের মনের মধ্যে ঠিক সেই রকম পরম পুরুষের ভাব এবং প্রেম জন্মায় যা সেই বিদ্যুৎ চমকানোর মত করে। আবার বিষয়ের চিন্তায় ইন্দ্রিয়ের কামনার জন্যে হটাৎ লুকিয়ে যায় । 

ভাব উদয় হলে মনে প্রেমের উদ্ভব হলে মানুষ সব কিছুকে আপন করে নিতে পারে । সমস্ত জগৎ আপন আপন বলে মনে হয়। কিন্ত ঐ যে ইন্দ্রিয়ের তাড়নায় আবার বিজলীর মত প্রেম ভাব হারিয়ে যায় । 

এই আকুতির কথা এখানে বলা হয়েছে। কালারে হারায়ে মানে হলো কৃষ্ণ কে হারায়ে আমরা দর্পনে খুঁজি । দর্পণ বলতে মনের আয়নার কথা বলা হয়েছে । 

যখন ওই রূপ স্মরণ হয় থাকে না লোক লজ্জার ভয় লালন ফকির ভেবে বলেন সদাই ওই প্রেম যে করে সে জানে । 


সেই অপরূপ রূপ যখন স্মরণ হয় তখন মানুষের মধ্যে লজ্জ্বা চলে যায়। তার কাছে আর কোন বাধা বাধা মনে হয় না। কারণ যার হৃদয়ে প্রেমের উৎপন্ন হয়েছে। প্রেম এসেছে সে সমস্ত জীব এবং সমস্ত জগৎকে নিজের মনে করতে পারেন। তাই নিজের মানুষের কাছে আর কোন লজ্জাও থাকে না । 


তাই পরম পুরুষের নিজের করে পাওয়া হলো মনের মানুষের সাথে মিলন হওয়া। কারণ প্রেমের গভীরতা ও ভাব ছাড়া এ মিলন সম্ভব নই। এই পরম পুরুষের সাথে মিলন যে মিলনে আর কোন বিচ্ছেদ নাই । 

চাতক প্রায় অহর্নিশি চেয়ে আছে কালো শশী এই গানের সারমর্ম


এই গানটি মহাত্মা লালন সাঁইজির অমৃত কথা স্বরূপ। এই গানের মধ্যে বাউল সম্রাট লালন সাঁইজি মনের মানুষের সাথে মিলনের কথা বলেছেন। সেই মনের মানুষ কে না পেলে কি যে জ্বালা বা কি যে বিরহ তা এই গানের মধ্যে ফুটিয়ে তুলেছেন । 

বিরহ ছাড়া যে প্রেমের সার্থকতা নেই। তবে এখানে মহাত্মা সাঁইজি যে মিলনের কথা বলেছেন তা কিন্তু পার্থিব জীবনের নারী পুরুষের মিলনের কথা বলেনি। এই মিলন হলো আত্মা আর পরমাত্মার সাথে মিলন। যে মিলন হলে আর কখনো বিচ্ছেদ হয় না। এখানে আর কোন দুঃখ থাকে না । 


তিনি সমস্ত সুখ দুঃখের অতীত হয়ে যান। সেই মিলনের কথা ফুটিয়ে তুলেছেন। তবে একেক জন একেক রকম ব্যাখ্যা বুজতে পারেন। যার ভাব যেই রকম সে সেই ভাবে এই গানটি বুঝে নেই। 


কারণ বাউল সাধকেরা সব সময় গৃহ ত্যাগী সন্যাসী হয় এবং তারা সর্বদা নিজেকে ওপরের কল্যাণের মাধ্যমে খুঁজে পাই। তার অন্যের উপকারের মাধ্যমে ঈশ্বরকে পাওয়ার অভিলাষ করেন। তাই এই গানের রচনা করেছেন বাউল সম্রাট লালন সাঁইজি । 

আপনার জন্যেঃ বৌদ্ধ ধর্মের পৌরণিক কাহিনী কি

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪