রুই মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা ও রুই মাছের অর্থনৈতিক গুরুত্ব
তাই আজকে আমরা রুই মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করবো এবং রুই মাছের ডিমের উপকারিতা, রুই মাছে কি প্রোটিন বিদ্যমান, রুই মাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম কি ? এই সব নিয়ে আজকের আর্টিকেল থাকছে আমার প্রিয় পাঠক বন্ধুরা । আশা করি সাথে সময় দিলে নিশ্চয় আপনাদের উপকারে আসবে বলে আমরা আশাবাদী ।
রুই মাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম কি
বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার মাধ্যমে যেহেতু এই মাছের গুনাগুন বিচার করা হয় সেহেতু রুই মাছের ও একটি বিজ্ঞানসম্মত নাম রয়েছে যাকে বলে বৈজ্ঞানিক নাম ।
কারণ প্রত্যেক প্রাণিকুল এবং জীবকুল সবার একটি করে সাধারণ নামের বাইরে বিজ্ঞান সম্মত নাম থাকে । তেমন করে রুই মাছের বিজ্ঞান সম্মত নাম হচ্ছে Labeo Rohita . আর ইংরেজিতে রুই মাছকে বলে Rohu Carp . এটি বাংলাদেশ ভারত এবং এশিয়া মহাদেশের প্রায় দেশে বহুল পরিচিত একটি মাছ ।
রুই মাছ কত টাকা কেজি
রুই মাছের মান অনুযায়ী দামের পার্থক্য হয়ে থাকে । যেমন দেশি রুই মাছ আবার মিয়ানমারের রুই মাছ বা বিদেশি রুই মাছ । এর সাথে সাইজের মধ্যে কয়েকরকম তারতম্য থাকে ।
রুই মাছের অর্থনৈতিক গুরুত্ব দিকে চিন্তা করলে দেশি রুই মাছ পাবেন সাইজে যদি ১ থেকে ১.৫ কেজি পর্যন্ত হয় তাহলে তার দাম হবে কেজি প্রতি ২০০ থেকে ২২০ পর্যন্ত । ০.৫ কেজি থেকে যদি ১ কেজি এর নিচে হলে এর দাম ১৮০ থেকে ২০০ ভিতরে থাকে ।
তবে এই দামগুলি হচ্ছে যখন রুই মাছের সিজন থাকে তখনের দরদাম সাইজ এবং কেজি প্রতি । আর একই সিজনে বিদেশী বা বার্মার অথবা মায়ানমারের রুই মাছ কিনতে যান তাহলে সাইজ যদি হয় ২.৫ কেজি থেকে ৪ বা ৫ কেজি ওজনের ।
তাহলে আপনাকে কেজি প্রতি গুনতে হবে ২৬০ টাকা থেকে ২৮০ টাকা পর্যন্ত অথবা এর চেয়ে বেশি হলে ৩০০ পর্যন্ত গড়াতে পারে ।
রুই মাছ সিজনাল ছাড়া যদি কিনতে জান তাহলে প্রত্যেক কেজিতে করে অন্তত ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি গুনতে হবে এমনকি সেটা ১০০ টাকা বেশি ও হয়ে যায় । তবে আমাদের দেশে বিশেষ করে বার্মার রুই মাছগুলি বেশি বিক্রি হয় ।
কারণ এই বার্মার বা মায়ানমারের রুই মাছ গুলি অনেকটা অপচয় থেকে রক্ষা করে কেবল তাদের সাইজের কারণে । বিশেষ করে আমাদের দেশে বিশেষ করে কোন খাবারের প্রোগ্রামে এই মাছের খুব চাহিদা রয়েছে যদিও এই বার্মার রুই মাছের দাম ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকা পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায় ।
আরও জানুনঃ জোঁকের তেলর উপকারিতা
রুই মাছের শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য
- ভাঁজঃ রুই মাছের পুরু ঠোঁট ভিতরের দিকে ভাঁজ করা দেখা যায় ।
- মুখঃ রুই মাছের মুখে উপরে ঠোঁটের মধ্যে একজোড়া গোঁফ দেখা যায় ।
- রংঃ পিঠের নিচের দিকে বাদামি রঙের হয় ।
- আকৃতিঃ রুই মাছের সামনের দিকে দেখতে সরু এবং পিছনের দিকে দেখতে বেশ চওড়া ।
- পেটের বর্ণঃ রুই মাছের পেট রুপালি ও সাদা রঙের হয়ে থাকে ।
- লম্বাঃ রুই মাছ লম্বায় প্রায় ২০০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়
- ওজনঃ ওজনে এই রুই মাছ প্রায় ৪০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে ।
- জীবনকালঃ এই রুই মাছ অন্তত ১০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে ।
যারা বিশেষ করে রুই মাছের চাষ করেন তাদের জন্যে এই বৈশিষ্ট গুলি জানার খুব বেশি দরকার । কারণ এতে করে তারা সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে পারে । অথবা সাধারণ মানুষ যারা এখনো রুই মাছের বৈশিষ্ট জানেনা তাদের জন্যে ও প্রয়োজনীয় তথ্য ।
রুই মাছে কি পুষ্টিগুন বিদ্যমান
রুই মাছের উপকারিতা
- মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে প্রোটিন ও ভিটামিনের উপস্থিতির কারণে ।
- রুই মাছ মানুষের ১৫% স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে দেয় ।
- হার্টের জন্যে খুবই উপকারী কারণ এতে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছে ।
- স্নায়ুতন্ত্রের স্বাস্থ্য খুবই ভাল রাখার ক্ষেত্রে রুই মাছের ভূমিকা অপরিসীম ।
- চোখের স্বাস্থ্য ভাল রাখে কারণ রুই মাছে ভিটামিন এ রয়েছে ১৪০ আইইউ ।
- শান্তিপূর্ণ ঘুমের ক্ষেত্রে ভাল এবং ইনসোমিয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায় ।
- একজিমা থেকে মুক্তি দিয়ে থাকে এই রুই মাছ ।
- বয়স্ক মানুষের জয়েন্টের ব্যথা থেকে রক্ষা করে ।
- ব্লাডপ্রেশার এবং ডায়বেটিসের ক্ষেত্রে বেশি উপকারিতা বয়ে আনে রুই মাছ ।
- ক্যালোরি থাকার কারণে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে ও অপরিসীম উপকার বয়ে আনে ।
- রুই মাছে বিদ্যামান প্রোটিন ও ফাইবার কোষ্টকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয় ।
- ভিটামিন ই এবং ভিটামিন বি ১২ এর উপস্থিতির জন্যে ত্বকের উপকার করে ।
রুই মাছের অপকারিতা
রুই মাছের উপকারিতা ও অপকারিতার মধ্যে শুধু যে উপকারিতা রয়েছে তা নই । অর্থাৎ বেশির উপকারিতা থাকলেও কিছুটা অপকারিতা রয়েছে । তবে তা মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করার মত তেমন কিছু নই । আমরা সেই বিষয়ে নজর দিয়ে বলার চেষ্টা করছি অপকারিতা গুলি কি ।
- বিশেষ করে যে রুই মাছ গুলি বিভিন্ন খাবার দিয়ে চাষ করার হয় এবং বিষাক্ত পানির মধ্যে চাষ করা হয় সেক্ষেত্রে আপনার একটু অপকারিতা বয়ে আনতে পারে ।
- রুই মাছ খেলে অনেকের মধ্যে একটি এলার্জি জাতীয় সমস্যা দেখে দিতে পারে তবে বেশির ভাগ মানুষের ক্ষেত্রে নই । যেমন লালচে ভাব, ফুরফুড়ি, বমি বমি ভাব এই রকম।
- রুই মাছের অপকারিতার মধ্যে মাছে বেশি ক্যালোরি থাকার কারণে বেশি খেলে ওজন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটু সমস্যা হতে পারে বা ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি রয়েছে ।
রুই মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সাথে কিছু সতর্কতা
- রুই মাছ যদিও সুস্বাদু তারপর ও বেশি খাওয়া উচিত নই এক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা বেশি প্রয়োজন ।
- বিষাক্ত পানি এবং অপরিষ্কার জায়গায় চাষ করার রুই মাছ খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবল্বন করা দরকার । কারণ মাছের সাথে বিষাক্ত কিছু জীবাণু আপনার শরীরের প্রবেশ করতে পারে ।
- রান্না করার সময় ভাল করে সিদ্ধ হয়েছে কিনা তা ভাল করে দেখে নিয়ে তারপর খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা থাকুন ।
রুই মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা পাশে অর্থনৈতিক গুরুত্ব
আমরা শরীরের জন্যে এতক্ষন রুই মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করেছি । রুই মাছ নিয়ে যদিও আমরা স্বাস্থ্য সম্পর্কে বার্তা দিয়ে থাকি কিন্তু রুই মাছের অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে অনেক বেশি আমাদের দেশের জন্যে ।
রুই মাছ নিয়ে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে খুব সহজে লাভবান হওয়ার একটি মাছ । এই রুই মাছের চাষ করে আমাদের দেশে অনেক বেকার তাদের বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়েছে । কারণ এটি খুব সহজে চাষ করা যায় ।
আমাদের দেশে দিন দিন রুই মাছের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে তাই পুকুর ও বিল কিংবা অনাবাদি জমিতেও অধিক পরিমানে খুব সহজে চাষ করে থাকে । অনেকে রুই মাছের চাষকে জীবনের একটি ব্যবসায়িক অংশ হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং জীবনের অভাবের চাকা ফিরিয়ে বর্তমানে ধনি হয়েছে ।
কারণ এটি খুব তাড়াতাড়ি বড় হয় এবং বাজারে এর দাম খুব ভাল । যার দরুন আমাদের দেশের অনেক মৎস চাষিরা এবং নতুন উদ্যোক্তারা দেশের অভাব পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করছেন ।
রুই মাছের অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে যদি আপনি নজর দেন তাহলে দেখবেন বৈদেশিক মুদ্রাও সরকারি তহবিলে রেমিটেন্স হিসেবে আয় হচ্ছে আবার অনেকের কর্মসংস্থান ও হচ্ছে । আপনি গ্রামে গেলে বেশির ভাগ দেখতে পাবেন এই পুকুর কিংবা বড় হাওড় এর একটি অংশ এই রুই মাছের চাষ করেই অর্থনৈতিক উন্নতি করছেন ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url