ঠোঁটে জ্বর ঠোসা কেন হয় ঠোঁটে জ্বর ঠোসা হলে কি সতর্কতা মেনে চলা দরকার
পোস্টসূচীপত্রঠোঁটে জ্বর ঠোসা কেন হয়-সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি ঠোঁটের এক পাশে গুটি গুটি কয়েকটি বিচি দেখা যাচ্ছে । কিন্তু কেন হচ্ছে অনেকে বুজে উঠতে পারছে না। আবার অনেকে মনে করেন এইগুলি ৱাতে জ্বর উঠার কারণে ঠোঁটে জ্বর ঠোসা উঠছে। আসলে কিন্তু তা নয়। আজকে আমরা জানার চেষ্টা করবো এই ঠোঁটে জ্বর ঠোসা কেন হয় তা নিয়ে ।
এর সাথে থাকছে জ্বর ঠোসা কি, ঘন ঘন ঠোঁটে জ্বর ঠোসা কেন হয় এবং এর কারণ কি, কীভাবে বুঝবেন জ্বর ঠোসা হয়েছে কি না, ঠোঁটে জ্বর ঠোসা হলে করণীয়, ঠোঁটে জ্বর ঠোসার ক্রিমের নাম, জ্বর ঠোসা সারানোর মেডিসিন, ঠোঁটে জ্বর ঠোসা হলে কি করব এই সব বিষয় নিয়ে কথা হবে আজকে। তাই সাথেই থাকুন।
জ্বর ঠোসা কি ?
ছোটকালে আমাদের ও একই অবস্থা হত । সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি জ্বর ঠোসা হয়েছে। আমাদের একটি ভ্রান্ত ধারণা চিল যে, রাত্রে রাত্রে জ্বর আসলে নাকি এই ঠোঁঠে জ্বর ঠোসা হয়। আসলে বর্তমানে ভ্রান্ত ধারণা ভ্রষ্ঠ করে দিয়েছে আমাদের ইন্টারনেটের দুনিয়া। যুগের হাওয়ায় এখন মানুষ হাতের নাগালেই অনেক সত্য তথ্য পেয়ে যাচ্ছে।
আসলে জ্বর ঠোসা হলো এক প্রকার লালচে গুটি গুটি বিচির মত। যাকে আমরা জ্বর ঠোসা বলে থাকি । এটি "হার্পিস সিমপ্লেক্স" ভাইরাস এর কারণে হয়ে থাকে । এই হার্পিস সিমপ্লেক্স উপস্থিতির কারণে আমাদের মধ্যে ঠোঁঠে জ্বর ঠোসা হয়ে থাকে ।
ঘন ঘন ঠোঁটে জ্বর ঠোসা কেন হয় এবং এর কারণ কি
এতক্ষন জানলেন জ্বর ঠোসা কি ?এবার চলুন আমরা জেনে আসার চেষ্টা করি
ঠোঁটে জ্বর ঠোসা কেন হয়। এটি হার্পিস ভাইরাসের কারনে হয়। এটি একপ্রকার ভাইরাস যা এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর কাছ থেকে আরেক জনের শরীরে প্রবেশ করে।
এটির হওয়ার কারণ হচ্ছে মানুষের শরীরে দুর্বলতার কারণে এই ভাইরাসের বা ঠোঁটে জ্বর ঠোসা দেখা দেয়। এই ভাইরাস একবার মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে তা আর যায় না। এই ভাইরাসটি নিষ্ক্রিয় হয়ে শরীরেই থেকে যায়। যখন আপনার শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে তখন এই এদের দেখা যাবে।
এদেরকে দেখা যাওয়ার কারণের মধ্যে আরেকটি হচ্ছে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া। অর্থাৎ কারো শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলেই এই ভাইরাসেরদেখা যায়।
কীভাবে বুঝবেন জ্বর ঠোসা হয়েছে কি না
ঠোঁটে জ্বর ঠোসা উঠার আগে কিছু সিমটম লক্ষ্য করা যায় যেমন ঠোঁটের যে জায়গায় জ্বর ঠোসা উঠে সেই জায়গায় হালকা চুলকানি হয় আবার অনেক ক্ষেত্রে ঝিম ঝিম করবে অনেকের আবার জ্বালাপোড়া ও করে থাকে। সাধারণত দুই একদিনের মধ্যে এদের আবির্ভাব ঘঠে।
ছোট ছোট ফুঁড়ফুঁড়ির মত লালচে ভাব নিয়ে দেখা যায়। ভিতরে পানি জমে ব্যথার সৃষ্টি করে। হওয়ার দুই একদিন পর ফুসকা ফেটে গিয়ে চলতে উঠে যায়। খুব ব্যাথা হয়।
ঠোঁটে জ্বর ঠোসা হলে কি করব বা ঠোঁটে জ্বর ঠোসা হলে করণীয়
ঠোঁটে জ্বর ঠোসা হলে করণীয় অনেক কিছু রয়েছে এবং সাথে নিজেকে একটু সামলে নিতে হয়। তবে ঠোঁটে জ্বর ঠোসা হলে আমার ঘরোয়া ভাবে অনেক রকম নিম্ন লিখিত গুলি সেবা নিতে পারি। যেমন
- রেফ্রিজারেশন বরফ জমা নিয়ে আপনার জ্বর ঠোসার জায়গায় আলতো করে বরফ লাগাতে পারেন। এতে করে জ্বালা পোড়া কমবে ।
- একটা বাটিতে ঠান্ডা জল নিয়ে পরিষ্কার সুতির কাপড় নিয়ে ঠান্ডা জলে ভিজিয়ে পানি ফেলে সুতির কাপড় দিয়ে সেঁক দিতে পারেন। এইগুলি হলো ঘরোয়াভাবে ঠোঁটে জ্বর ঠোসা হলে করণীয়।
এই দুইটা বিষয় যত্ন করে লাগালে আপনি ভাল সুফল পাবেন। এবং জ্বালা পোড়া থেকে মুক্তি পাবেন।
ঠোঁটে জ্বর ঠোসার ক্রিমের নাম
ঠোঁটে জ্বর ঠোসা উঠলে আমরা কোন ক্রিম লাগাবো সেটা নিয়ে চঞ্চল হয়ে পড়ি খুব সহজে। বা কি ঔষধ লাগানো যায় তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ি। তাই স্কিন বিশেষজ্ঞরা বলছেন এন্টিভাইরাল ক্রিম বা মলম লাগানোর জন্যে। কারণ এই এন্টিভাইরাল মলম এই ঠোঁটের জ্বর ঠোসার জন্যে খুব কার্যকরী।
যেহেতু এটি একটি হার্পিস ভাইরাস, তাই এন্টিভাইরাল ক্রিম বা মলম খুব বেশি কাজ করে এই ক্ষেত্রে। লাগানোর সময় একটু সতর্কতার সাথে লাগাবেন। ঠোঁটে জ্বর ঠোসার ক্রিম বা মলম লাগানোর আগে ভাল করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন।
ঘষে ঘষে না লাগিয়ে হাতের আঙ্গুল দিয়ে চেপে চেপে লাগাবেনর চেষ্টা করবেন। নিচে কিছু ঠোঁটে জ্বর ঠোসার ক্রিমের নাম দেওয়া হলো। চাইলে আপনারা এই ক্রিম গুলি লাগাতে পারেন সুবিধার উপর নির্ভর করে ।
যেমন সিমপ্লোভির,ভাইরুনিল, অ্যাসেরাক্স,নোভাইরাক্স,ভাইরাক্স এবং ভাইরক্সি এই ক্রিম গুলি আপনার ঠোঁটের জ্বর ঠোসার জন্যে খুব ভালভাবে সহায়তা করবে ।
আরও জানুন ঃ
ঠোঁটে জ্বর ঠোসা সারানোর মেডিসিন
এই জ্বর ঠোসা হলে সাধারণ এক থেকে দশ দিন পর্যন্ত থাকে। হয়ত দুই তিন দিন পর ফুরফুড়ি গুলি গলে গেলেও এর চলটা উঠে গেলে আরো কয়েকদিন লাগে সম্পূর্ণ ভাল হতে। তাই ব্যথা কমানোর জন্যে ঠোঁটে জ্বর ঠোসা হলে কিছু মেডিসিন আপনি সেবন করতে পারেন যা আপনার হাতের নাগালে পাওয়া যায়।
যেমন আপনি চাইলে প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ খেতে পারেন অথবা আইবুপ্রোফেন খেতে পারেন। আবার শিশুদের জন্যে প্যারাসিটামল সিরাপ খাওয়াতে পারেন। এই ছাড়া আর তেমন বেশি ঔষধের প্রয়োজন নেই ।
ঠোঁটে জ্বর ঠোসা হলে কি সতর্কতা মেনে চলা দরকার
যদিও এই ঠোঁটে জ্বর ঠোসা হলে কয়েকদিনের মধ্যে চলে যায় তারপর ও বলব কিছু সতর্কতা মেনে চলা খুব জরুরি। কারণ আমরা সতর্কতা মেনে না চললে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে ।
- জ্বর ঠোসা হলে সেখানে হাত লাগাবেন না। এবং এইগুলি যখন ফেটে যায় তখন একদম লাগানো যাবে না হাত। কারণ এর থেকে সংক্রমিত হতে পারে।
- জ্বর ঠোসায় হাত চলে গেলেও ভুলে। ভাল করে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিবেন।
- জ্বর ঠোসা হলে জ্বর ঠোসার জল যাতে চোখের মধ্যে চলে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ আমাদের চোখের কর্নিয়ার মধ্যে যদি এই জ্বর ঠোসার জল চলে যায় তাহলে অন্ধত্ব হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
- ঠোঁটে জ্বর ঠোসা হলে দৈহিক সম্পর্ক থেকে বিরত থাকুন ।
ঠোঁটে জ্বর ঠোসা হলে যা করা যাবে না
- কারো ঠোঁটে বা মুখের সংস্পর্শে যাওয়া যাবে না ।
- কাউকে চুমু খাওয়া যাবে না ।
- আক্রান্ত স্থানে হাত দেওয়া যাবেন না ।
- শিশুদের আদর করা থেকে বিরত থাকুন ।
- আপনার ব্যবহৃত জিনিসপত্র একটু আলাদা রাখার চেষ্টা করুন ।
- যে খাবার গুলি আপনার আক্রান্ত স্থানে স্পর্শ করলে বা লাগলে জ্বালা পোড়ার সমস্যা হতে পারে সে সমস্ত খাবার পরিত্যাগ করুন ।
ঠোঁটে জ্বর ঠোসা নিয়ে শেষ কথা
ঠোঁটে জ্বর ঠোসা কেন হয় এই কথা বলতে বলতে আমরা অনেকদূর চলে এসেছি। আশা করি ঠোঁটে জ্বর ঠোসা হলে অনেক কিছু সতর্কতা এবং দিক নির্দেশনা আমরা আমাদের আর্টিকেলে বলার চেষ্টা করেছি এই নিয়ে আর তেমন কিছু জানার নেই। তাই নিজেকে সতর্ক রাখুন এবং নিজে পরিষ্কার থাকুন সুস্থ থাকুন এই আশা করে আজকের মত শেষ করেছি ভাল থাকবেন। ধন্যবাদ।
কিছু প্রয়োজনীয় প্রশ্নাবলী (FAQ)
ঠোঁটে জ্বর ঠোসা ও জ্বরের সাথে সম্পর্ক আছে কী?
না ঠোঁটে জ্বর ঠোসার সাথে জ্বরের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। ভিবিন্ন কারণে এই জ্বর আস্তে পারে মানুষের শরীরে। কিন্তু ঠোঁটে জ্বর ঠোসা হয় ভাইরাসের কারণে। কারণ এটি এক প্রকার ভাইরাস যাকে হার্পিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস বলা হয়। এই ভাইরাস যাদের মধ্যে রয়েছে তাদের মধ্যে কেবল মাত্র এই ঠোঁটে জ্বর ঠোসা হয় ।
ঠোঁটের জ্বর ঠোসা কি ছোয়াছে ?
হ্যা ছোঁয়াচে রোগ। এই জ্বর ঠোসা ঠোঁটে উঠার পর যখন এটি ফেটে গিয়ে কারো স্কিনে জ্বর ঠোসার জল গুলি লাগে বা আক্রান্ত স্থান যদি কারো স্কিনে লাগে তাহলে এই ভাইরাস অপরের কাছে সংক্রমিত হয় ।
ঠোঁটে জ্বর ঠোসা কি সবার হয় ?
না, ঠোঁটে জ্বর ঠোসা সবার হয় না। এটি একটি ভাইরাস। যাকে হার্পিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস বলে। তাই যাদের শরীরে এই ভাইরাস আছে তাদেরই কেবল মাত্র ঠোঁটে জ্বর ঠোসা হয় ।
জ্বর ঠোসা কোথায় কোথায় হয় ?
জ্বর ঠোসা বিশেষ করে ঠোঁটের আসে পাশে বা ঠোঁটের কিনারায় হয়ে থাকে ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url