কৃমির ঔষধ কতদিন পর পর খেতে হয় এবং শিশুদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম
পোস্টসূচীপত্র শিশুদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম। এই সব নিয়ে আমরা খুবই সমস্যায় পড়ি প্রায় সময়। তাই আমরা আলোচনা করবো কৃমির ঔষধ কতদিন পর পর খেতে হয় এবং কৃমি কি এবং কেন হয়, কৃমির প্রকারভেদ, কৃমির ঔষধ ট্যাবলেট এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, কৃমির ঔষধ কোনটা ভালো, কিভাবে বুঝবেন শিশুর কৃমি হয়েছে ,শিশুদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম, কৃমি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কি, গর্ভবতী অবস্থায় কৃমির ঔষধ,কৃমির ঔষধ কি খালি পেটে খেতে হয়, কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর কি ভিটামিন খেতে হয় এই সব নিয়ে আমরা আজকে বিশেষ ভাবে বলার চেষ্টা করবো। আশা করি সাথেই থাকবেন ।
কৃমি কি এবং কেন হয়
কৃমির ঔষধ কতদিন পর পর খেতে হয় এই নিবন্ধে আমরা আগে জানব কৃমি কি এবং কেন হয় কৃমি হচ্ছে এক প্রকারের ছোট পরজীবী প্রাণী । এরা অপরের উপর ভর করে চলে । এদের দেহ নলের মত লম্বা । এরা প্রায় প্রত্যেক প্রাণীর ভিতরে থাকে সেটা মানুষ থেকে শুরু করে প্রত্যেক প্রাণীর মধ্যে । এই কৃমি বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের হয়ে থাকে। বিভিন্ন অবস্থান থেকে এদের সৃষ্টি বা জন্ম হতে পারে ।
আমাদের বিভিন্ন রকম খাওয়ার থেকে শুরু করে গৃহ পালিত পশুর থেকে বিড়াল থেকে বাথরুমের কমেড থেকে নোংরা জায়গা থেকে অথবা বাজার থেকে আনা বিভিন্ন শাকসবজি থেকে বা অপরিষ্কার ফল মূল থেকে এদের লার্ভা আমাদের মুখে দিয়ে পড়ে। সেখান থেকে তারা আমাদের অন্ত্রে গিয়ে বৃদ্বি হয় এবং এইভাবে কৃমি হয়।
কৃমির প্রকারভেদ
কৃমি শুধু জন্ম লাভ করেন না এরা অনেক প্রকারের হয়ে থাকে। এবং একেকটি একেক মাপের হয়। সাধারণত কৃমি চার প্রকারের হয়ে থাকে। যথা ফিতা কৃমি, বক্র কৃমি, গোল কৃমি ও সুতা কৃমি। এইগুলির আবার একেক টি একেক আকারের হয়। যেমন
ফিতা কৃমি : ফিতা কৃমি গুলি আকারে অনেকটা লম্বা হয়ে থাকে। প্রায় এরা ২ মিটারের উপরে হয়। কিছু কিছু কৃমি ৩ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
বক্র কৃমি : এই কৃমি গুলি খালি চোখে দেখা যায় না। এবং এইগুলি আকারে খুবই ছোট হয়ে থাকে। এবং এদের রং গোলাপি হয়।
গোল কৃমি : এই কৃমিগুলি সাধারণভাবে প্রায় ১ ফুটের চেয়ে ১, ২ ইঞ্চি কম বেশি হয়। এবং এই গোল কৃমি কয়েক প্রকারের হয়। যেমন গোল, সাদা রঙের , লাল রঙের এবং গোলাপী রঙের হয়ে থাকে।
সুতা কৃমি : এইগুলি সাদা রঙের হয়ে থাকে। দেখতে সুতার মত। ছোট এবং পাতলা হয়।
কৃমির ঔষধ কতদিন পর পর খেতে হয়
কৃমির উপদ্রপ হলেই এই চিন্তাটি আমাদের বিশেষ করে জেঁকে বসে থাকে মাথায়। যদিও আমরা কৃমিকে খুব একটা বেশি গুরুত্বে নিই না। কিন্তু এই কৃমি আমাদের অনেক সমস্যার মুখোমুখি করতে পারে। তাই নিয়ম মেনে কৃমির ঔষধ খাওয়া লাগে। কিন্তু কৃমির ঔষধ কতদিন পর পর খেতে হয় সেই নিয়ে প্রশ্ন।
বিশেষ করে যেহেতু কৃমি একেবারে নির্মূল করা যায় না। কারণ আপনি কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর কৃমি মারা গেলেও এদের লার্ভা গুলি থেকে যায় । এবং এই লার্ভা থেকে আবার এদের জন্ম হয় । তাই ৬ মাস পর পর কৃমির ঔষধ খাওয়ার কথা ডাক্তারের বলে থাকে। তবে প্রথম ডোজ খাওয়ার ৭ দিন পর পুনরায় আরেকডোজ খেতে হয় ।
কৃমির ঔষধ ট্যাবলেট এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
প্রত্যেক ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকেই । তাই কৃমির ঔষধের ও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। কৃমির ঔষধ ট্যাবলেট খেলেই কিছু কিছু সমস্যায় ভোগতে হয়। তার মধ্যে যেমন
- বমি বমি ভাব হওয়া।
- হটাৎ জ্বর আসা
- অস্থায়ীভাবে চুল পড়া
- মাথা ব্যাথা হওয়া
- খিঁচুনি হওয়া
- প্রস্রাবের রং গাঢ় হওয়া
কৃমির ঔষধ কোনটা ভালো
এই প্রশ্ন তা খুব সচরাচর সবাই করে থাকে। কৃমির ঔষধ কোনটা ভাল। কারন প্রত্যেক ঔষধ সবার জন্যে নয় । কারণ সবাই একই কৃমির সমস্যায় ভুগে না। একেক উপস্বর্গ থাকে একেক কৃমির আক্রমণের কারণে। তাই অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কৃমির ঔষধ খাওয়া জরুরি ।
তবে প্রায় মানুষের জন্যে যে ঔষধ গুলি প্রায় ডাক্তারে দিয়ে থাকে তা সম্পর্কে আমরা বলার চেষ্টা করবো । বিশেষ করে কৃমির উপদ্রোপের কারণে অ্যালবেন্ডানজোল বা অ্যালবেন্ডানজোলাম নামে প্রসিদ্ব এই কৃমির ঔষধ। এই কৃমির ঔষধ সেবনের মাধ্যমে আমাদের অন্ত্রে থাকা পরজীবীর উপদ্রব থেকে মুক্তি পেতে পারেন ।
কিভাবে বুঝবেন শিশুর কৃমি হয়েছে
শিশুদের পেটে কৃমি হওযার পর কিছু কিছু লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। এই সমস্ত উপস্বর্গ গুলি দেখলে সহসা ধরে নেবেন শিশুর কৃমি হয়েছে। আমরা এই লক্ষণগুলি বলার চেষ্টা করছি ।
- মলদ্বারে চুলকানি বা বিড় বিড় করা
- পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া
- মস্তিস্ক খিটখিটে হওয়া
- ওজন কমে যাওয়া
- খাওয়ার অরুচি
- পেতে ব্যাথা অনুভব
- বমি ভাব হওয়া
- রক্ত শুন্যতা
- মেয়ে শিশুদের প্রসাবের সমস্যা হওয়া
এছাড়াও আরো অনেকগুলি কারন দেখা যেতে পারে । শিশুর কৃমি হলে অনেক প্রকারের অশোভন আচরন করা। তাই বিশেষ করে উপরে বর্নিত লক্ষন গুলিই বেশিই প্রধান ।
শিশুদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম বা কৃমির ঔষধ কতদিন পর পর খেতে হয়
কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর সম্পূর্ন রুপে কৃমি নির্মূল হয় না । এর কারন স্বরুপ বলা যায় কৃমি মরে গেলেও এই কৃমির লার্ভাগুলি থেকে যায় এবং সেখান থেকে এদের আবার উৎপাত শুরু হয়ে যায়। তাই ৬ মাস পর পর কৃমির ঔষধ খেতে হয় ।
শিশুদের কৃমির ঔষধের মাত্রা বা ডোজ একটু হিসেব করে বা সাবধানে দিতে হবে । মনে রাখতে হবে শিশুর বয়স ১ বৎসর কাল যতক্ষন পর্যন্ত হবে না ততক্ষন পর্যন্ত কোন প্রকার কৃমির ঔষধ দেওয়া যাবেনা । তবে ১ বছরের পরে ৬ মাস পর পর কৃমির ঔষধ দিতে পারবেন । একবার কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর পরের বার ৭ দিন পর প্রাথমিক আরেক টি ডোজ দিতে হবে বা খাওয়াতে হবে ।
কৃমি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কি
কৃমির ঔষধ কতদিন পর পর খেতে হয় এই নিবন্ধে আমরা আজকে কৃমি থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু সংক্ষিপ্ত উপায় বলার চেস্টা করব। আশা করি আপনাদের জীবনে খুবই উপকারে আসবে । ঘরোয়া ভাবে ও এই কৃমি থেকে মুক্তি পেতে পারেন। কারন এমন কিছু উপাদান আমরা প্রতিদিন ব্যবহার করি এবং সেগুলি আমরা প্রত্যেহ হাতের নাগালে পাই । তাই চলুন কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করি ।
যেমন আমরা কৃমি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যে কৃমির ঔষধ হিসেবে নারিকেল খেতে পারি । আবার রসুন খেতে পারেন । আরও আছে লবঙ্গ চিবাতে পারেন। তারপর কুমড়োর বীজ খেতে পারেন। আবার গাজর তো আমরা প্রায় বাজারে দেখতে পায় এটিও আপনি খেতে পারেন কৃমি নির্মূল করার ক্ষেত্রে। তারপর হলুদ এবং আনারস ও এই কৃমি থেকে মুক্তি পাওয়ার অন্যতম আহার। এই গুলি চাইলে আপনি মাঝের মধ্যে খেতে পারেন । এতে করে আপনার কৃমির উপদ্রব থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
গর্ভবতী অবস্থায় কৃমির ঔষধ
- মল ত্যাগের পর ভাল করে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ।
- নক পরিষ্কার রাখা এবং নক কেটে ফেলা যথা সময়ে। কারন এই নকের ভিতরে কৃমির ডিম লুকিয়ে থাকে ।
- ঘরে খাওয়ার তৈরী করার আগে ভাল করে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ।
- রান্নার ঘর পরিষ্কার রাখা
- বেসিন ভাল করে ফিনাইল বা অন্যান্য এসিড দিয়ে পরিষ্কার রাখা ।
- স্যাঁতসেঁতে জায়গা পরিহার করা ।
কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর কি বাচ্চাদের বা শিশুদের ভিটামিন খেতে হয়
কৃমির ঔষধ কতদিন পর পর খেতে হয় এর সাথে বাচ্চাদের বা শিশুদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর ভিটামিন খেতে হয় কিনা তও আমরা একটু জানব। কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর ভিটামিন খেতে হয় কিনা এই প্রশ্ন অনেকের মনে থাকে কিন্তু আবার অনেকে মনে করে ভিটামিন খেতেই হবে। খেতেই হবে এটি এক প্রকার ভ্রান্ত ধারণা ।
তার আগে জানতে হবে কৃমির ঔষধ কিভাবে কাজ করে। কৃমির ঔষধ খাওয়ালে কৃমি কি মরে যায় কিনা। হ্যা যখন কৃমি ঔষধ খাওয়ানো হয় তখন কৃমি গুলিকে প্যারালাইসিস করে দেয়। তখন কৃমিগুলি পুষ্টির অভাবে মারা যায়। এতে করে শিশুর ভিটামিনের কোন অভাব হয় না। তবে আপনি চাইলে ভিটামিনের সাপ্লিমেন্ট গুলি খাওয়াতে পারেন।
শেষ কথা
যদিও আজকে কৃমির ঔষধ কতদিন পর পর খেতে হয় এই নিয়ে কথা হয়েছে । কিন্তু এর পর ও আমরা চেস্টা করেছি কৃমির উপদ্রব হয় কি কারণে তা বলার এবং এর সাথে গর্ভবতীর জন্যে কৃমির ঔষধ দেওয়া যাবে কিনা। এই সব কিছু নিয়ে আমরা বলেছি এবং চেষ্টা করেছি আপনাদের একটা ভাল সাজেশন দেওয়ার। তাই পাশে থাকবেন আরো এই রকম সমস্যা নিয়ে আমরা হাজির হবো। সেই আশাকে ভাল থাকবেন।
আরো কিছু জানার ইচ্ছে (FAQ)
কৃমির ঔষধ কি খালি পেটে খেতে হয় ?
না খালি পেটে নই। খাওয়ার পর বা ভরা পেটে খাওয়া ভাল ।
কৃমি কিভাবে জন্ম লাভ করে ?
বিভিন্ন রকম নোংরা থেকে জন্ম লাভ করে। যেমন ভাল করে হাত না দোয়া খাওয়ারের মাধ্যমে। বা টয়লেট থেকে আসার পর ভাল করে হাত না ধুলে। আরো বিভিন্ন রকম নোংরা থেকে এরা যেকোন মাধ্যমে আপনার পেতে প্রবেশ করে ডিম হয়ে। এবং সেখানে গিয়ে বৃদ্বি পাই ।
কৃমির ঔষধ ৬ মাস বাদে ১ বৎসর পর খেলে কি কোন সমস্যা হয় ?
অনেকের ক্ষেত্রে সমস্যা হয় না বিশেষ করে যারা পরিষ্কার পরিছন্ন করে চলে বা খুব সচেতন । কিন্তু যদি উপদ্রব বেড়ে যায় বা লক্ষণ দেখা যায় তাহলে ৬ মাসের পর পর কৃমির ঔষধ সেবব করা বাঞ্চনীয় ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url