ইন্টারনেট আসক্তির কুফল কি কি এবং ইন্টারনেট আসক্তি থেকে মুক্তির উপায়
সূচীপত্রঃরাত হয়েছে এখন ২ টা । আর এক ঘন্টা ফেইসবুকে রিলস দেখেই ঘুমিয়ে যাব । না হয় একটা নাটক বা মুভি শেষ করেই ঘুমিয়ে পড়ব । এই করে করে আমাদের প্রতিদিন রাত্রি ৩টা বেজে যাচ্ছে তারপর ও ঘুমানোর কোন নাম গন্ধ নেই। শরীরের যে কি হাল হচ্ছে আমি নিজেও টের পাচ্ছিনা ।
চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। এই হচ্ছে ইন্টারনেট আসক্তির কুফল । এখন যা পড়ছেন তা হচ্ছে আমাদের নিত্যদিনের ইন্টারনেট ব্যবহারের কথা বলছি। ইন্টারনেট আসক্তির কুফল কি কি সেই সম্পর্কে আমরা আলোচনা করব এবং চেষ্টা করব কিভাবে কুফল থেকে মুক্তি পাওয়া যায় সেই সম্পর্কে বলার ।
ইন্টারনেট আসক্তি কি ?
ইন্টারনেট আসক্তির কুফল কি কি এই বিষয়ে জানার আগে জানব ইন্টারনেট আসক্তি কি ? এই বিষয়টি বুজতে হলে জানতে হবে আপনার ইন্টারেনেটে ব্যবহারের প্রয়োজন কতটুক । আধুনিক বিশ্ব যেহেতু ইন্টারনেটের উপর ভর করে চলে সেহেতু আমাদেরকে ও সে হিসেবে জীবন পরিচালিত করতে হচ্ছে । তবে মনে রাখতে হবে আমাদের যতটুক দরকার ততটুক যেন আমরা ব্যবহার করে থাকি ।
তা নাহলে জীবনের ছন্দপতন অবসম্ভাবী । তাই ইন্টারনেট আসক্তি মানে হলো প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করা হচ্ছে ইন্টারনেট আসক্তি। কোন বিষয়ে যখন মানুষের আসক্তি চলে আসে তখন প্রিয় মানুষের প্রতি ও বিরক্তি এসে যায়। আসক্তি বিষয়টা ঠিক নেশা করার মত।
মন মস্তিস্কে এক জায়গা চিন্তা করে এবং সেই প্রকার ক্রিয়া বিক্রিয়া ঘটে । ইন্টারনেট ও সেই রকম একজাতীয় নেশার মত। নেশার চেয়ে আরো ভয়ংকর। এভাবে প্রতিটা শিক্ষার্থী এখন মোবাইল এবং কম্পিউটার নিয়ে যেভাবে আসক্ত ।
বর্তমানে এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে অসুস্থতা হয় তার সবচেয়ে প্রায় ৮৫.৯ শতাংশ অসুস্থ হয় হচ্ছে এই ইন্টারনেট আসক্তির কারনে। এটি আমাদের দেশেরই জনপ্রিয় একটি খবরের কাগজ দৈনিক জনকন্ঠের প্রতিবেদনে তুলে ধরেছেন ।
কিভাবে বুঝবো আমি ইন্টারনেটে আসক্ত কিনা
- প্রিয়জনের সাথে পূর্বের আচরন আর বর্তমানের আচরন ব্যবধান পাবেন ।
- ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্যে লুকিয়ে সময় বের করা ।
- ইন্টারনেট কানেকশান কোন কারনে ব্যহত হলে মেজাজ খিটখীটে হয়ে যাওয়া ।
- রাত জাগার অভ্যাস হয়ে গেলে বুজবেন আপনি ইন্টারনেট আসক্ত হয়েছেন ।
- অনলাইনে যতই সময় কম দিতে চাচ্ছেন কিন্তু পারছেন না ।
- সোশ্যাল মিডিয়াতে সময় দিতে গিয়ে সকালে সময় বরাবর ঘুম থেকে উঠতে পারছেন না ।
- ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে ঠিক সময় খাওয়া দাওয়া ও হচ্ছে না ।
ইন্টারনেট আসক্তির মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্তির কারণ
ইন্টারনেট আসক্তির কুফল গুলির মধ্যে এই সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি প্রথম এবং প্রধান বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কারন বিশ্বের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ১০০ শতাংশ মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষই ইন্টারনেট আসক্তির মধ্যে এই সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত ।
সেই হিসেবে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরাই আসক্ত হয়েছেন । কিভাবে এবং কেন এই ইন্টারনেট আসক্তিতে রয়েছে শিক্ষার্থীরা, সেই কারনটা ও জানার চেস্টা করেছেন যুক্তরাজ্যে এবং যুক্তরাষ্ট্রের গভেষকেরা । সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যালগরিদম গুলি কিভাবে আমাদের কোমল মতি শিক্ষার্থীদের মন হরণ করছেন সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে পেয়েছেন ।
মানব মস্তিস্কের ডোপামিনের উপস্থিতি। আগে বলে ডোপামিন কি ? ডোপামিন হচ্ছে আমাদের মস্তিস্ক থেকে উৎ পন্ন এক রাসায়নিক। যা আপনার আনন্দ, তৃপ্ততা এবং অনুপ্রেরনার অনুভূতি জাগায়। এই সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যা লগরিদম ঠিক সেই কাজটি করে থাকে ।
আমাদের কাছে আনন্দ, তৃপ্তির এবং অনুপ্রেরনা মুলক কন্টেন্ট গুলি দিয়ে আমাদের কে আটকে রাখে যা আমার দিন দিন আসক্ত হয়ে পড়ি মাদকের ন্যায় এই সোশ্যাল মিডিয়াতে।
ইন্টারনেট আসক্তির কারণ
ইন্টারনেট আসক্তির অনেক কারন থাকে। শুধু কোন একটি কারনে এত বেশি শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট আসক্ত হয় না। আমরা কিছু কিছু কারন এখানে তুলে ধরার চেস্টা করব। বিশেষ কিছু কারন নিয়ে।
বন্ধু বান্ধবের মাধ্যমে
বর্তমান আমরা যাদের সাথেই মিশিনা কেন । দেখবেন কেউ না কেউ সোশ্যাল মিডিয়াতে মেসেঞ্জার, হোয়াটস্যাপ বা ফেইসবুক অথবা ইন্সটাগ্রাম এই সব মিডিয়াগুলিতে বিচরন করছেন ।
এবং পাশের জনের মধ্যে ও ঠিক একই ভাবে সেই সুন্দর্য দেখে বা সুন্দর ভিডিও বা ছবি দেখে ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্যে ইচ্ছে জাগছে অনায়াসে । এইভাবে ধীরে ধীরে একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে বা বন্ধুবান্ধবের মাধ্যমে এই ইন্টারনেট আসক্তির কারন গুলি এসে যাচ্ছে ।
তথ্য সংগ্রহ
যেহেতু আমরা সবাই জানি বর্তমানে ইন্টারনেট হল সকম তথ্য ভান্ডারের জননী। সেহেতু আমাদের বিভিন্ন রকম অজানা তথ্য জানার জন্যে কৌতুহল বসত আমরা ইন্টারনেট ব্যবহার করি। এই অজানা কিছু জানার মাধ্যমে ধীরে ধীরে আমরা কখন যেন এই ইন্টারনেটের প্রতি আসক্ত হচ্ছি ।
বভিন্ন রকম মানসিক অবসাধের কারনে আমরা যখন মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয় তখন ও কিন্তু মানসিক শান্তির কারনে আমরা এই ইন্টারনেটের দারস্থ হয় । মনকে হালকা রাখার জন্য বা একটু আনন্দ খুঁজে পাওয়ার জন্যে ইন্টারনেট ব্রাউজ করি। এই ভাবে এইটি আমাদের মস্তিস্কে জায়গা করে নিয়ে আমাদের আসক্ত করে ।
সংবাদ মাধ্যম
দেশে কোন সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ঘটানা জানার জন্যে আমরা উতসুক হয়ে থাকি । অথবা ভাইরাল কোন ঘটনা জানার জন্যে আমরা খুব তারাতারি সংবাদ মাধ্যমকে বেচে নিয়ে থাকি। এইভাবে সংবাদ দেখতে দেখতে কত রকমের সংবাদ একটার পর একটা আমাদের সামবে ভেসে আসে যার দরুন আমরা ধীরে ধীরে এইভাবে ইন্টারনেট আসক্ত হয়ে পড়ি ।
ইন্টারনেট আসক্তির কুফল কি কি
আসক্তি ব্যপারটাই একটা বিশাল বিষয় । মনে রাখবেন কি শারীরিক বা কি মানসিক সব অবস্থাতেই আসক্তি কোন প্রকারেই ভাল বিষয় নই । যেহেতু ভাল বিষয় নই সেহেতু ইন্টারনেটের কুফল গুলিও বিশেষভাবে আমরা আলোচনা করার চেষ্টা করব।
ইন্টারনেট আসক্তির কুফল কি কি সেটা বলতে হলে আমাদের অনেক কিছুই আমরা হাতের নাগালেই দেখতে পাব। ইন্টারনেট আসক্তির কুফল হিসেবে আমাদের দুইদিকে কুফল বয়ে আনে ফিজিক্যাল এবং সাইকোলজিক্যাল । শারীরিক এবং মানসিক ভাবে দুই দিকেই আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি এই ইন্টারনেট আসক্তির কুফল হিসেবে ।
আরও পড়ুন ঃ
রাত জাগলে মেয়েদের কি ক্ষতি হয়
ইন্টারনেট আসক্তির ফিজিক্যাল কুফল কি ?
- চোখের ক্ষতি করা
- চোখের নিচে কালো দাগ হওয়া
- ঘাড় ও মাথা ব্যাথা
- নিদ্রাহীনতা
- পুষ্টি হীনতা
- ওজন বৃদ্বি বা কমে যাওয়া
- হজমের সমস্যা হওয়া
ইন্টারনেট আসক্তির সাইকোলজিক্যাল কুফল কি ?
- অজানা ভয় কাজ করা
- মানসিক অবসাদ
- মেজাজ খিটখীটে হওয়া
- দুশ্চিন্তা ভর করা
- ইন্টারনেট ছাড়া কাউকে আপন বলে মনে না হওয়া
- কাজে প্রতি অনিহা
- রাত আসলেই প্রিয় বলে মনে হওয়া
ইন্টারনেট আসক্তি থেকে মুক্তির উপায়
মুক্তির উপায় মানে হল মুক্ত হয়ে যাওয়া। আমরা যা মনে করি মুক্ত হয়ে যাওয়া মানে সব কিছু ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র হয়ে যাওয়া। তা কিন্তু নই। প্রয়োজনে বর্তমান থাকা আর অপ্রয়োজনে দূরে থাকা। আমরা কার থেকে মুক্তি চাচ্ছি ? নিজের থেকে মুক্তি চাচ্ছি। আপনি ইন্টারনেট ব্যবহার করলেও কিছু আসে যাবে না ।
আবার না করলেও কিছু আসে যাবে না। কিন্তু কথা হচ্ছে ইন্টারনেট আসক্তি থেকে মুক্তির উপায় কি । আমাকে মানে নিজেকে সুস্থ রাখতে আমি ইন্টারনেট আসক্তি থেকে মুক্তি খুঁজছি। এই মূল্যবোধটার শিক্ষা আগে নিতে হবে। তাহলে আর ভয় নেই। চলুন তাহলে এবার জানা যাক কিভাবে ইন্টারনেট আসক্তি থেকে মুক্তি হওয়া যায় সেই বিষয়ে একটু জেনে আসি।
ঔষধের মাধ্যমে
ঔষধ সেবনের মাধ্যমে আপনি ইন্টারনেট আসক্তি কমাতে পারেন । Antianxiety এবং antidepressant এই দুইটা ঔষধ ইন্টারনেটের আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যে প্রমানিত হয়েছে । তবে মনে রাখতে হবে সব ইন্টারনেট আসক্তি ব্যাক্তির জন্যে ঔষধের প্রয়োজন নেই। তবে ঔষধের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া খুব জরুরি।
সঙ্ঘ
একটি ভাল সঙ্ঘ আপনাকে যে কোন আসক্তি থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্যে যথেষ্ট। তাই একটি ভাল দলের সাথে সময় দিন এবং আপনার জীবনের মূল্যবোদ নিয়ে আলোচনা করুন । তাহলে নিজের সম্পর্কে জানবেন এবং বুজবেন। এবং আপনি ধীরে ধীরে ইন্টারনেট আসক্তি থেকে মুক্তি পাবেন।
প্রকৃতির সাথে সময় দিন
প্রকৃতি আমাদের অনেক কিছুই শিখিয়ে দিয়ে থাকেন । কিন্তু আমরা তা সহজে বুজতে পারি না। একদিন দুইদিন করে নিজেকে একটু একা একা প্রকৃতির সাথে সময় দিন। তাহলে আপনার মধ্যে একটু নির্মলতা আসবে এবং আপনি কৃত্রিমতা থেকে দূরে সরে আসতে পারবেন এবং ইন্টারনেট আসক্তি থেকে মুক্তি পাবেন ।
বই পড়ার অভ্যাস
বই পড়ার অভ্যাস আমাদের জীবন থেকে একদম উঠে যাচ্ছে বললেই চলে। বই আপনাকে যে জ্ঞান দান করবে তা আপনার জীবনকে পরিবর্তন করার জন্যে যথেষ্ট বলে মনে করি। নিত্যদিন বই পড়ার অভ্যাস করুন তাহলেও আপনি ইন্টারনেট আসক্তি থেকে মুক্তি পাবেন ।
ইন্টারনেট আসক্তির কুফল কি কি নিয়ে শেষ কথা
সর্বোপরি আমাদের জীবনে ইন্টারনেট আসক্তি আমাদের সমস্ত বাধা বিপত্তির কারন । তাই ইন্টারনেট আসক্তির কুফল কি কি আশা করি আর তেমন কোন প্রশ্ন থাকার কথা নই। আমরা চেষ্টা করেছি ইন্টারনেট আসক্তির কুফল কি কি তা নিয়ে একটি একটি টপিক ধরে ধরে বলার। তাই নিজেকে সুস্থ রাখুন। ইন্টারনেটের ফাঁদে পড়ে নিজেকে আর নষ্ট করবেন না। ধন্যবাদ ভাল থাকবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url