ন্যানো টেকনোলজি বলতে কি বুঝায়। ন্যানো টেকনোলজির সুবিধা অসুবিধা কি ?

ন্যানো টেকনোলজি বলতে কি বুঝায়

পোস্টসূচীপত্রঃন্যানো টেকনোলজি বলতে কি বুঝায় | আমরা প্রতিদিন টেকনোলজি নিয়ে চলাফেরা করি কিন্তু আমরা অনেকে ন্যানো টেকনোলজি সম্পর্কেই অনেকে জানিনা। বিশেষ করে ন্যানো টেকনোলজি দিয়ে এখন বিশ্বে বড় বড় কাজ গুলি সম্পাদন হচ্ছে। তাই এই ন্যানো টেকনোলজি সম্পর্কে আমাদের জানার আগ্রহ দিন দিন বেড়েই চলছে। 

তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ন্যানো টেকনোলজি কি এবং এর জনক কে ?  ন্যানো টেকনোলজি বলতে কি বুঝায়? ন্যানো প্রযুক্তির ব্যবহার, ন্যানো টেকনোলজি কিভাবে আমাদের উপকারে আসে,ন্যানো টেকনোলজি সুবিধা অসুবিধা এবং ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হয় কোনটিতে এই সব কিছু নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব। সঙ্গে থাকবেন আশা করি আপনার জানা হবে অন্তত। কারন আমরা কোন জ্ঞান দেওয়ার জন্যে আসি নাই। শুধু ব্যক্তিগত জানা গুলি আপনাদের কাছে জানাতে এসেছি । 

ন্যানো টেকনোলজি কি ? 

ন্যানো মানে হল একদম ক্ষুদ্র। এই ন্যানো বুজাতে হলে আমাকে একটু পিছনে যেতে হবে।  ন্যানো টেকনোলজির আগে ম্যাক্রো ছিল সেটি এখন ক্ষুদ্র হতে হতে ন্যানো হয়েছে। ন্যানো (Nano) শব্দটি গ্রীক শব্দ Nanos থেকে এসেছে। 


এটিকে আরো গভীরভাবে বুঝাতে হলে বলতে হয়। এক ন্যানোমিটার হল মেট্রিক পদ্বতিতে একশো কোটি ভাগের এক ভাগ কে একন্যানো মিটার বলে।১,০০০,০০০,০০০ (একশো কোটি ভাগের) মাত্র এক ভাগ। আর এই এক ভাগ দিয়ে যে প্রযুক্তি গুলি বা টেকনোলজি গুলি তৈরি হয়েছে তাকে ন্যানো টেকনোলজি বলে। 

ন্যানো টেকনলজির জনক কে ? 

ন্যানো টেকনোলজির জনক হচ্ছে রিচার্ড ফাইনম্যান (Richard Feynman). 
তিনিই একমাত্র জনক যে সর্বপ্রথম ন্যানো টেকনোলজির ধারনা এবং বর্ননা দিয়েছেন। যার ফলপ্রসু হিসেবে আজকের আধুনিক বিশ্ব পরিচালিত হচ্ছে ।

তিনি ১৯৫৯ সালে ক্যালিফোর্নিয়া ইনিস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটিতে প্রথম এই ন্যানো টেকনোলজি সম্পর্কে আলোচনা করেছিলেন এবং ধারনা দিয়েছিলেন তিনি আমেরিকান বিশ্ব বিখ্যাত পদার্থবিদ।  

ন্যানো প্রযুক্তির বা টেকনোলজির ব্যবহার

বর্তমান বিশ্ব এখন প্রযুক্তির উপর ভর করে চলছে। এক মুহুর্ত ও আপনি টেকনোলজি ছাড়া চলতে পারবেন না । এই ন্যানো পার্টিকেল দিয়ে বিশ্বকে যে কিভাবে সংকোচন করেছে এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে আমরা আরো একটু গভীরভাবে আলোচনা করি। 


ন্যানো টেকনোলজি বলতে কি বুঝায়

যোগাযোগ ক্ষেত্রে ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার ঃ

আগে যে সমস্ত স্তলযান, জলযান এবং আকাশযান রয়েছে সেইগুলিতে বর্তমানে যোগাযোগের ক্ষেত্রে টেকনোলজির ব্যবহার দেখা যাচ্ছে এবং মানুষ সুবিদা ভোগ করছে । হালকা ওজনের এবং কম জালানি দিয়ে তা চলা সম্ভব হচ্ছে ।

মহাকাশ অভিযানে ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার ঃ 

মহাকাশে অভিযান পরিচালনা করার জন্যে বর্তমানে ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার রয়েছে যা এখন বর্তমানে মানুষ দেখতে পাচ্ছে । 

বায়ু ও পানি দূষণ রোধে ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার ঃ

পূর্বে বায়ু ও পানি দূষন রোধে আমরা কত দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে । কিন্তু বর্তমানে ন্যানো টেকনোলজির আশির্বাদে এখন বিভিন্ন কারখানার বর্জ্য এবং ডাইং বা টেনারির পানি গুলি ন্যানো টেকনোলজির মাধ্যমে পরিশোধন করা যাচ্ছে ।

কম্পিউটার হার্ডওয়্যার তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার ঃ 

কম্পিউটার হার্ডওয়্যার এখন খুব ছোট হতে হতে মানুষের হাতের নাগালে। আগে সুপার কম্পিউটার এর ব্যবহারের কথা সবাই শুনেছেন নিশ্চয়। অনেক বড় কম্পিউটার ।যা চালাতে কয়েকজন লাগত । কিন্তু এখন ন্যানো টেকনোলজির আশির্বাদে অনেক বেশি প্রসেসর খুব ছোট ভাবে অনেক বেশি কাজ করার জন্যে সুযোগ করে দিয়েছে। 

মোবাইল ব্যবহারে ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার ঃ  

বর্তমান বিশ্ব এখন মোবাইলের উপর ভর করে আছে শুধু এই ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহারের জন্যে। অনেক বেশি কাজ আপনি এই ছোট্ট মোবাইল দিয়ে করতে পারছেন শুধু ন্যানো টেকনোলজির আশির্বাদ।   

প্রসাধন শিল্পে ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার ঃ 

প্রসাধনী শিল্পে এখন ন্যানো টেকনোলজির কারসাজি বিদ্যমান। ত্বকের ক্যান্সার রোধ করার নিমিত্তে জিংক-অক্সাইড এর ন্যানো পার্টিকেল যুক্ত হওয়ার মানুষের কল্যান হচ্ছে । 

কৃত্রিম অঙ্গ-পতঙ্গ তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার ঃ 

বর্তমানে যাদের অকালে হাত পা বা অন্যান্য অঙ্গ ক্ষয় হচ্ছে বা যারা প্রতিবন্ধী তাদের কল্যানে এই ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করে কৃত্রিম অঙ্গ-পতঙ্গ প্রতিস্থাপন করছে।  

বস্ত্র শিল্পে ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার ঃ 

বস্ত্র শিল্পে এখন ওজন হালকা এবং 
ঘনত্ব ঠিক রাখার জন্যে ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার হচ্ছে । 
তাছাড়াও রয়েছে আরও অনেক কিছুতে এই ন্যানো টেকনোলজির ব্যাবহার । তার মধ্যে 

  • খেলাধুলার সামগ্রী তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার
  • চিকিৎসা ক্ষেত্রে ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার
  • খাদ্যশিল্পে ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার
  • জ্বালানি ক্ষেত্রে ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার
  • ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার
  • ন্যানো রোবট তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার

ন্যানো টেকনোলজি কিভাবে আমাদের উপকারে আসে

বর্তমানে এই ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহারে আমাদের অনেক কিছু উপকারে আসে । তার কিছু নমুনা দেওয়ার চেষ্টা করছি। যেমন এখনের কম্পিউটার এর প্রসেসরগুলি ১০০-২০০ ন্যানোমিটার ট্রানজিস্টার দিয়ে প্রস্তুত করে থাকে । যা দিয়ে আমরা খুব ছোট কম্পিউটার ডিভাইস দিয়ে অনেক বেশি কাজ করা সম্ভব হবে এবং যা খুব সহজে বহনযোগ্য। 

এই ন্যানো টেকনোলজির ট্রানজিস্টার গুলি আরও ছোট করার জন্যে চেষ্টা চলছে। শুধু কি কম্পিউটার? স্মার্টফোন, ফ্ল্যাটটিভি যা একদম পাতলা আকারে  ন্যানো চিপ লাগানো থাকবে যা  দেওয়ালের সাথে সংযুক্ত করার মত ন্যানো টেকনোলজির কাজ চলছে । এতে করে মানুষের বিশেষ সুবিদা হবে। সুবিদা বলতে মানুষের খুব হাতের নাগালে জীবন কে উপভোগ করতে পারবেন । 

ন্যানো প্রযুক্তি বা টেকনোলজির সুবিধা অসুবিধা

ন্যানো টেকনোলজির অনেক সুবিধা যেমন রয়েছে ঠিক তেমন করে অসুবিধা ও রয়েছে। তবে সুবিধা খুব বেশি কিন্তু অসুবিধার তুলনায়। চলুন আমরা সুবিধা এবং অসুবিধা গুলি একটু লিষ্ট আকারে জেনে আসি । 


ন্যানো টেকনোলজি বলতে কি বুঝায়

সুবিধা ঃ 

  • ন্যানো টেকনোলজির আশির্বাদে চিকিৎসা বিজ্ঞানে আমুল পরিবর্তন এসেছে এবং তা মানুষ সুবিধা ভোগ করছে। যা বিভিন্ন রকম ঔষধ এবং ক্যান্সার রোগের ঔষধের মত বিষয়গুলি দেখলে বুজা যায় ।
  • সৌরবিদ্যুত এর আবির্ভাব ঘঠেছে ।
  • ন্যানো পার্টিকেল ব্যবহার করে বর্তমানে অনেক ভারী কিছুকে হালকা এবং বহনযোগ্য করে তুলেছে এর সাথে দামের ও অনেক সাশ্রয় হয়েছে।  
  • ইলেক্টনিক্স ডিভাইস গুলি এখন অনেক বড় থেকে হাতে করে বহন করার মত সুবিধা পেয়েছি । 
  • খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে নানা রকম প্যাকেজিং এর অনেক সুবিধা দিয়েছে এই ন্যানো টেকনোলজি। 

অসুবিধা ঃ

  • এই ন্যানো পার্টিকেল দিয়ে ভয়ংকর অস্ত্র তৈরি করা যাচ্ছে। যা মানব সভ্যতার জন্যে খুবই ক্ষতিকর। 
  • ন্যানো টেকনোলজি মানুষের শরীরের জন্যে অনেক ক্ষতি করে ।
  • এই ন্যানো টেকনোলজি অনেক ব্যয় বহুল ।  

ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হয় কোনটিতে

ন্যানো টেকনোলজি বলতে কি বুঝায় এই নিয়ে আমাদের আর্টিকেলে অনেক কিছু বলা হয়েছে । এবার আসব ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হয় কোনটিতে এই নিয়ে ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার হয় অনেক কিছুতে । কিন্তু বিশেষ ভাবে ইলেক্ট্রনিক্স এবং চিকিতসাবিজ্ঞানে এই ন্যানো টেকনোলজি বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। এবং ভবিষ্যতে ও অনেক আরো আমূল বিপ্লব আনবেন বলে মনে করছেন অনেক দেশের গবেষকেরা। 

শক্তি উৎপাদন এর ক্ষেত্রে ও এর অনেক অবদান রয়েছে । তবে কিছু কথা বা বললেই নই । এই ন্যানো টেকনোলজি বিপরিত ভাবে আমাদের পরিবেশের উপর ক্ষতিকারক প্রভাব নিয়ে সংশয় রয়েছে। যা অস্বিকার করার কোন অবকাশ নেই । তবে এই নিয়ে প্রচুর গবেষনা চলছে । 

ন্যানো টেকনোলজি কাজ করার পদ্ধতি সমূহ

ন্যানো টেকনোলজি বলতে কি বুঝায় তা আমরা বুঝেছি কিন্তু এবার ন্যানো টেকনোলজির কাজ করার পদ্বতিগুলি আমরা দেখব ।  ন্যানো টেকনোলজি দুটি পদ্ধতিতে কাজ সম্পাদন করে থাকে । যথা ছোট থেকে  বড় এবং বড় থেকে ছোট  বা ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ আবার বৃহৎ থেক ক্ষুদ্র। 

ছোট থেক বড় টেকনোলজি  ( ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ )

এই পদ্ধতিতে একটি অবজেক্ট কে ছোট থেকে বড় করতে করতে অনেক কিছু তৈরি করে থাকে এই টেকনোলজি যেমন পোশাক কে ছোট থেক বড় করে । 

বড় থেকে ছোট  টেকনোলজি  ( ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ )

এই পদ্ধতিতে একটি অবজেক্ট কে ছোট করতে করতে তাকে ভেঙ্গে একদম ন্যানো অবজেক্ট এ পরিনত করে এই ন্যানো টেকনোলজি। যেমন ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস গুলি তৈরি হয় । 

 শেষ কথা ন্যানো টেকনোলজি বলতে কি বুঝায় নিয়ে 

ন্যানো টেকনোলজি নিয়ে অনেক ক্ষন ধরে আমরা কথা বলেছি এবং চেষ্টা করেছি এই সম্পর্কে কিছু ধারনা দেওয়ার। তাই আশা করি এই ন্যানো টেকনোলজি বলতে কি বুঝায় এই নিয়ে আর তেমন প্রশ্ন থাকার কথা নই। তবে এই ন্যানো টেকনোলজি আমাদের জীবনে যদিও কিছু বিরূপ প্রভাব রয়েছে তাছাড়া ও ন্যানো টেকনোলজি ভবিষ্যত জীবনে আমাদের অনেক এগিয়ে নিয়ে যাবে এই আশাই শেষ করছি । ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন, নিজের খেয়াল রাখবেন । 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪