মানসিক শান্তি: এটি কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?
একটু মানসিক শান্তি প্রয়োজন , কি করলে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়, কোন জায়গায় গেলে মানসিক শান্তি পাওয়া যায় এবং কেন জীবনে মানসিক শান্তির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিচ্ছু নেই ? এই সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করব আশা করি আপনার জীবনের জন্যে খুব প্রয়োজনে আসবে এবং আপনার চিন্তা চেতনার পরিবর্তন ঘটবে ।
মানসিক শান্তি কি ?
মানসিক শান্তি কি ? এই বিষয়ে তা সহজে মুখে বলার ভাষা এই জগতে কারো নেই। কারণ এই মানসিক শান্তি হলো একমাত্র অনুভবের বিষয়। যা আপনি নিজেই অনুভব করবেন। পরম যত্নে।
তারপর ও যদি বলতে হয় তবুও নিজের ভাষায় বলি। সমস্ত চাওয়া পাওয়ার বাদ দিয়ে, মনে যা শান্তি অনুভব করে তাকেই মানসিক শান্তি বলে।
মানে যা কিছু মনেই অনুভব করবে। কারণ মন যেমন দেখা যায় না ঠিক তেমন ভাবে মানসিক শান্তি ও দেখা যায় না । মন যে আছে সেটা যেমন আপনি অনুভব করেন ঠিক তেমন ভাবে শান্তিটাও আপনি মনে অনুভব করবেন ।
মানসিক শান্তি কেন গুরুত্বপূর্ণ ?
কারণ হলো মানসিক শান্তি থাকলে মানুষ মুক্ত মনের হয়। সহজে মানুষের প্রতি কিংবা জীবের প্রতি ভালোবাসা আসে। সমাজ অথবা পারপার্শিকতার উন্নতি হয়। জীবন কে চেনা যায় । অজস্র অশান্ত মানুষের ভীড়ে নিজেকে খুঁজে পাওয়া যায়। বাস্তবতাকে উপলভব্দি করা যায় ।
সুখ এবং মানসিক শান্তির মধ্যে পার্থক্য
অভাব থাকলেই তো মানুষ খুঁজে। তাই আগে চিন্তা করবেন আপনি কিসের অভাবে আছেন। কি মানসিক শান্তির অভাবে নাকি সুখের অভাবে আছেন। শারীরিক আর মানসিক দুটি ব্যাপার রয়েছে । সুখ আর শান্তির মধ্যে প্রচুর পার্থক্য বিদ্যমান। সুখ শুধু আপনি শারীরিকভাবে ভাবে ভোগ করবেন আর মানসিক শান্তি সেটা শুধু অন্তরে অনুভব করবেন ।
মানুষ শুধু শারীরিক সুখের জন্যই ছোটাছুটি করেন। প্রচুর অর্থবিদ্যার জন্য দৌড়াদৌড়ি করেন শারীরিক কষ্ট করেন এগুলো শুধু শারীরিক সুখের মধ্যেই বিদ্যমান।আর মানসিক সুখ সেটা শুধু সন্তুষ্টির মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। যেমন আপনি যা কিছু পান তা দিয়ে যদি আপনি সন্তুষ্টি থাকতে পারেন সেটা মানসিক শান্তিতেই অনুভব করবেন।
আর আমাদের মধ্যে যে অভাব অনটন রয়েছে সেটা সুখ আর দুঃখের সাথে তুলনা করা যায়। কিন্তু যিনি মনে সব সময় সন্তুষ্টির মাধ্যেম শান্তি অনুভব করেন তার কাছে বিশাল চাওয়া পাওয়া কিন্তু তেমন কোনো বিষয় নই।
একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, সুখ কিন্তু ক্ষনিকের আর শান্তি কিন্তু চিরদিনের । সুখ টাকা দিয়ে পাওয়া যায় আর মানসিক শান্তি কিন্তু টাকা বা অর্থ প্রাচুর্য দিয়ে পাওয়া যায় না । যার কোন শারীরিক বিকার তেমন নেই, মানে কোনো সুখ দুঃখ শারীরিক ভাবে অনুভব করেন না ।
যেমন উদাহরণ স্বরূপ একজন পাগল বা কোনো গরিব দুঃখী যারা রাস্তায় ঘুমিয়ে পড়ে তাদের কাছে সুখ হলো ক্ষনিকের কিন্তু তারা যে মানসিক শান্তি তে আছে। সেই মানসিক শান্তি কিন্তু আপনি বিরাট অট্টালিকায় পাবেন না। তাই শারীরিক সুখ আর মানসিক শান্তির মধ্যে পার্থক্য তা বুজতে হবে।
আরো পড়ুন ঃ
ডাটা এন্ট্রি ফ্রিল্যান্সিং এর ভবিষ্যৎ কেমন? সম্পূর্ণ নির্দেশিকা Complete Guide 2024
বাংলাদেশের সবচেয়ে কম দামে ল্যাপটপ 2023
মানসিক শান্তি কাকে বলে
কিছু উদাহরণ এখানে দেওয়া যায়। যেমন করে আমাদের জন্ম হতে চোখ পেয়েছি দেখার জন্যে। হাত পেয়েছি পা পেয়েছি কাজ করার জন্যে এসব কিছু কিন্তু এক একটি উদাহরণ শান্তি পাবার ক্ষেত্রে।
কারন অনেকেই দেখবেন, পঙ্গুত্ব নিয়ে জীবন বহন করছেন। কেউবা অন্ধত্ব নিয়ে জীবন বহন করছেন তাদের কাছে আমাদের সাথে তুলনা করলে সেক্ষেত্রে আমরা বহু গুনেই মানসিকভাবে শান্তিতে আছি। এইভাবে আপনি শান্তি খুঁজে পেতে পারবেন। এইভাবে নেতি নেতি বিচার করে শান্তি খুঁজে বের করার নাম মানসিক শান্তি ।
মানসিক শান্তির উপায়
প্রথমেই বলে রাখি মানসিক শান্তি উপায় খুঁজতে হলে আপনাকে আপনার চেয়ে বেশি কিংবা যারা খুবই অধিক পরিমাণে সুখে আছে তাদের দেখতে যাবেন না। তাদের দেখে আপনি কখনো কিন্তু শান্তি পাওয়ার উপায় খুঁজে পাবেন না।
আপনাকে প্রথমেই লক্ষ্য করতে হবে তারা কি উপায়ে শান্তিতে আছে এই বিষয়গুলো আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে তারা কি অর্থের দিক দিয়ে মানসিক শান্তিতে আছে নাকি শারীরিকভাবে শান্তিতে আছে।
আর শান্তি বিষয়টি কখনোই চোখে দেখা যায় না সেটা অনুভব করতে হয়। মনে রাখবেন সুখে থাকলেই কিন্তু শান্তিতে থাকা যায় না অনেক কিছু চোখে আমরা যা কিছু দেখি মানুষ খুব বেশি সুখী আছে তাই বলে সে কিন্তু শান্তিতে নেই। শান্তি বিষয়টা আলাদা একটা বিষয় সেটা আপনি নিজেই বহন করে নিয়ে চলেন।
আপনার চেয়ে যারা হতদরিদ্র বা দিন মজুর তারা কিভাবে নিজের জীবন বহন করে শান্তিতে আছে। সেটা পরিলক্ষিত করবেন। তাহলে দেখবেন আপনি দিন দিন আপনার শান্তি পাওয়ার উপায় খুঁজে পাচ্ছেন। বস্তুত শান্তি পাওয়ার উপায় এইভাবে খুঁজে পেতে হয় ।
মানসিক শান্তির ওষুধ
খুব গভীরভাবে বলতে গেলে বলবো । আপনার জীবনে যা কিছু না পাওয়ার বেদনা ঘটেছে। সব কিছুকে খুব আপন করে মেনে নিন ।মেনে নিলেই সমস্ত দুঃখের অবসান ।মানসিক শান্তি আপনি অনুভব করবেন প্রতি পদে পদে। এটাই মানসিক শান্তি পাওয়ার ওষুধ। আর যদি না মেনে নিন তাহলে সমস্ত দুঃখের শুরু হবে এখান থেকেই।
জীবনে মানুষ যেখানে মেনে নিতে পারে না সেখান থেকেই মানুষের অশান্তি শুরু হয়। তাই বলব আপনার জীবনের যা কিছু অপূর্ণতা সব কিছুকে আপন করে মেনে নিন। মনে করতে হবে যা কিছু আপনি পাননি নিশ্চয় সেটি আপনার জন্যে নই। আর যা কিছু আছে তা আপনার জন্যে এসে যাবে। এই চিন্তা চেতনায় আপনাকে একদিন মানসিক শান্তি পাওয়ার ওষুধ হিসেবে কাজ করবে। হ্যা তবে চেষ্টা করতে ভুলবেন না। চেষ্টা করতে হবেই ।
একটু মানসিক শান্তি প্রয়োজন
একটু মানসিক শান্তির প্রয়োজন এই কথাটি মানুষ খুব বেশি অবসাদ পূর্ণ হলে এ বিষয়টাকে খুব খোঁজ করে থাকেন । সারা জীবন যখন মানুষ কর্ম ব্যস্ত থাকে জীবনের অবসানে তখন মানুষ একটু মানসিক শান্তি খুঁজে থাকেন।
তাই বলি শান্তি কখনো অর্থ দিয়ে কেনা যায় না। সেটা মানুষের অন্তরে থাকে সর্বদায়। তাই একটু মানসিক শান্তির প্রয়োজন হলে আপনি আপনার পরিবারকে সময় দিন। আপনার আপন জনদের সাথে সময় কাটান। তাদের আনন্দের সাথে নিজেকে আনন্দিত রাখুন তাহলে দেখবেন আপনি প্রয়োজনীয় মানসিক শান্তি পেয়ে যাচ্ছেন ।
কি করলে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়
প্রকৃত পক্ষে ত্যাগ করলেই মানসিক শান্তি পাওয়া যায়। এইটা চিরন্তন সত্য বাক্য। ত্যাগের দ্বারাই মানুষ শান্তি লাভ করতে সক্ষম হয়। ত্যাগের শান্তি অনন্তর। আর ভোগের শান্তি ক্ষনিকের। ভোগে আসল শান্তি পাওয়া যায় না । ভোগে প্রকৃত শান্তি থাকে না, ভোগে কেবল দুঃখ থাকে অজস্র । সুখ থাকে ক্ষনিকের ।
আপনি যত বেশি ভোগ করবেন তত বেশি দুঃখকে বরণ করবেন, অশান্তিকে বরণ করবেন। তাই যত বেশি ভোগের চিন্তা বাড়বে তত বেশি দুঃখের কারন বাড়বে। তাই কর্মফলের আশা ত্যাগ করুন। কেবল দায়িত্ব হিসেবে কাজ করুন। দেখবেন কখনো আপনার জীবনে মানসিক শান্তির অভাব হবে না ।
কোন জায়গায় গেলে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়
জগতে এমন কোন জায়গা নেই যেখানে গেলে আপনি মানসিক শান্তি পাবেন । পৃথিবীর সব জায়গায় আপনি শান্তি পাবেন কেননা শান্তি আপনার হৃদয়ে বহন করে আপনি চলছেন । তাই আপনার সন্তুষ্টিই আপনার শান্তি ।
আপনি যেখানেই যান না কেন আপনি শান্তিটাকে বহন করে যেহেতু চলছেন সেহেতু আপনি সমস্ত জায়গায় শান্তি পাবেন। আবার সমস্ত জায়গায় গিয়েও আপনি অশান্তিতে থাকবেন যদি আপনার ভিতর পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি না থাকে ।
জীবনে মানসিক শান্তির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিচ্ছু নেই
এ জীবনে আমরা যতই কিছু করি না কেন সেটা হতে পারে অর্থের জন্যে , সংসার সাজানোর জন্যে কিংবা পরিবারের সুখের জন্যে।দৌড় জাঁপ যত সংগ্রাম করি না কেন সবকিছুর একটি মূল কারণ, সেটি হলো মানসিক শান্তি পাওয়া।জীবনে মানসিক শান্তির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু নেই।
এতকিছু করার পরেও যার জীবনে কোন মানসিক শান্তি নেই তিনি জীবিত কিংবা বেঁচে থাকতে নরম যন্ত্রণা ভোগ করেন। আমরা যাকে জাহান্নাম বলি বা নরক বলি দুজোগ বলি সব কিছুই আমরা এখানেই ভোগ করব যদি মানসিক শান্তি আমাদের হৃদয়ে না থাকে।
তাই জীবনে এত কিছু করার পরেও যাতে আমরা একটু মানসিক শান্তি পাই সেই বিবেচনায় আমাদের জীবনকে আমাদের অতিবাহিত করতে হবে এবং সুন্দরভাবে সুচারুরূপে আমাদের জীবনের কামনা বাসনা যতক্ষণ যত কম করতে পারি ততই আমাদের জীবনে মানসিক শান্তি বিরাজ করবে ।
পরিশেষে
শান্তি শান্তি শান্তি ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url